সম্পর্ক

পারভীন রব্বানী | বৃহস্পতিবার , ২ জুন, ২০২২ at ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব-/ ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব।’ জীবনকে সঞ্জীবনী সুধা রসে সিক্ত করে তুলতে সম্পর্কের ভূমিকা অসীম। অসংখ্য অনুভূতির সম্ভারে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হয় নিবিড়। সম্পর্ক একদিকে খুবই কঠিন এবং অন্যদিকে মধুর, নাজুক একটা শব্দ। এর ভিত্তি কতটুকু স্থায়ী, কতটুকু নড়বড়ে, কতদূর এর ডালপালা, শিকড় ছড়িয়ে পড়ে কেউ বলতে পারে না। সম্পর্ক গড়া যত কঠিন, ভাঙা তত সহজ। প্রতিনিয়ত এতে জল ঢালতে হয় অর্থাৎ পরিচর্যা করতে হয়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক অথবা ইমোশনাল কমিটমেন্ট উভয় অথবা ততধিক পক্ষেরই থাকতে হবে। ভালোবাসায় জড়ানো এই সম্পর্ককে যত্ন করতে হয়। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতি প্রাণীসবার সাথেই একটা সূক্ষ্ম সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকেই গড়ে ওঠে।

প্রধান সম্পর্ক গড়ে উঠে বৈবাহিক কারণে। আস্তে আস্তে এর শাখা প্রশাখা বাড়তে থাকে। বিস্তার লাভ করে রক্তের সম্পর্ক, আত্মীয়তার সম্পর্ক। আরো নানারকম সম্পর্ক গড়ে উঠে জীবন চলার পথে। আত্মার সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, দেনাপাওনার সম্পর্ক, স্বার্থের সম্পর্ক, কাজের সম্পর্ক…..সম্পর্কের শেষ নাই।

যে কোন সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, সততা, আস্থা। শতভাগ বিশ্বাস না পাওয়া গেলেও নড়বড়ে, ক্ষীণ বিশ্বাস নিয়েও যুগ যুগ ধরে সম্পর্ক টিকে থাকে বা থাকতে বাধ্য হয়। সম্পর্ক নষ্ট হয় ইগো, আচার আচরণ, ব্যবহার, অবহেলার কারণে। বাবা, মা র সাথে সন্তানের সম্পর্ক সবচাইতে দৃঢ় হয়। সেখানে থাকে অকৃত্রিম, শর্তহীন এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। ভাই বোনের সাথে সম্পর্ক যেমন থাকে মধুর, তবে অনেক সময় স্বার্থের কারণে হয়ে যায় যোজন যোজন দূর। অনেক সম্পর্ক উপরে উপরে টিকে থাকে কিন্ত গাঢ়তা পায় না। আর কিছু কিছু সম্পর্কে যোগাযোগের অভাবে ফাটল ধরে।

দুটো সম্পর্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল। এক বন্ধুত্ব, অন্যটি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। বন্ধুত্ব একটা চলমান প্রক্রিয়া। আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হলো বন্ধু। বন্ধু হতে পারে যে কেউ। বন্ধুত্বের কোনো বয়স নেই। সততা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি, আস্থা, পারষ্পরিক বোঝাপড়া, ইত্যাদি হতে পারে বন্ধুত্বের ভিত্তি। অনেক কঠিন সময়ে সুখে দুখে এই সম্পর্ক একেবারে কাছে এসে দাঁড়ায়। দু হাত দিয়ে একে অন্যকে আগলে রাখে। সময় বিশেষে এর মধ্যে আবার হিংসা, প্রতিযোগিতাও ঢুকে যায়। তবে সত্যিকারের বন্ধুত্ব পারে এক সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি দিতে।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে, টক, মিষ্টি, ঝাল। প্রযুক্তি যত এগুচ্ছে, সমাজ যত আধুনিক হচ্ছে,এই সম্পর্কে ততই ভাঙনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই সম্পর্ক যতই দৃঢ় হবে, ততই পরিবার এবং পরবর্তী বংশধর সব দিকে সফল হবে। আত্মত্যাগ, বিশ্বাস, নির্ভরতা, ক্ষমা, শেয়ারিং, সর্বোপরি বন্ধুত্ব স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে করে তোলে মধুর এবং মজবুত।এই মজবুত বন্ধন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত হাতে হাত রাখার অঙ্গীকার করে। প্রতিটি সম্পর্কের আলাদা সৌন্দর্য আছে, আলাদা মাধুর্য আছে, এবং আলাদা সম্মানও আছে। তাই সম্পর্ক বুঝে এর মর্যাদা রাখতে হবে। তবেই জগত আলোকে আলোকময়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমমতাজউদদীন আহমদ : বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিভা বিকশিত হয় বই পড়ার মাধ্যমে