জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আপনারা টিকতে পারবেন না

সিআরবিতে বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরকারকে বিদায়ের বার্তা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে বলেন, আপনি দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। দেয়ালের লিখন পরিষ্কার, আপনাকে বিদায় হতে হবে। আর কোনো পথ নাই। আর যদি দেয়ালের লিখন পড়তে না পারেন আপনাদের জন্য মোটেও মঙ্গল হবে না। বাংলাদেশের জনগণ জয়ী হবে। তার ফলশ্রুতিতে আপনাদের আগামী দিনের রাজনীতি কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আপনারা টিকতে পারবেন না। গতকাল নগরের সিআরবিতে অনুষ্ঠিত বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আমীর খসরু।

সরকারের পদত্যাগ ও ১০ দফা দাবিতে সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশের সকল জেলা, উপজেলাগুলোতে প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, আন্দোলনকে ধাপে ধাপে আমরা নিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তীতে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কঠিন কর্মসূচি আসবে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিভাগীয় দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে আমীর খসরু বলেন, কিছু চাটুকারের দল নিয়ে জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যদি মনে করেন, আবারো আরেকটি অবৈধ ভোট চুরির কাজ-কারবার করবেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ সে কাজ করতে দেবে না। এরি মধ্যে ভোট চোরদের চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ভোট চুরির যে প্রকল্প, যে প্রক্রিয়া তার সাথে কারা কারা যোগ দিতে চাচ্ছে, কোন উচ্ছিষ্টভোগী সে দিকে যাচ্ছে, কোন রাজনৈতিক নেতা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, আগামী দিনের কোনো নেতা, কোনো দল বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। এখন তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামল দিয়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। অর্থাৎ পুলিশের একটি অংশ, সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের একটি অংশকে ব্যবহার করছে। তবে আমরা বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি না। গুলি যখন চলছে তখনও বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করেছে। আগামী দিনের আন্দোলনেও চট্টগ্রামবাসীকে, সকলকে এগিয়ে যেতে হবে। এসময় কারাবন্দী দলীয় নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তাদের মুক্তি দাবি করে লাভ নাই, তবে মুক্ত যেন করতে পারি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এমন আন্দোলন হবে যেন মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

খসরু বলেন, আমাদের ১০ দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজকের অবস্থান কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের আরেকটি ধাপ আমরা এগিয়ে গিয়েছি। পলোগ্রাউন্ডে রেকর্ডকারী জনসভা পুরো বাংলাদেশে উত্তাল সৃষ্টি করে। এরপর ২৪ তারিখের গণমিছিলে চট্টগ্রামবাসী আবারো প্রমাণ করেছেন দখলদার, অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট সরকারকে জনগণ আর চায় না। আজকে লক্ষ জনতার এ কর্মসূচি থেকে আবারো পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন দখলদার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হও। তিনি বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনের যে বার্তা চট্টগ্রাম থেকে আমরা দিই সেটা সারা দেশে চলে যায় এবং মানুষ উজ্জ্বীবিত হয়। পলোগ্রাউন্ডের পর বিপুল জনসংখ্যার মাধমে বাকি নয়টি সভা আমরা করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, সরকার ভয়ে নিজেরা এত বেশি ভীত হয়ে গিয়েছে তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়। মানুষ যখন ভীত হয়ে আরেকজনকে ভয় দেখাতে চায় তার অবস্থাটা আপনি বুঝতে পারছেন। এত ভীত তারা আজকে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা সে ভয়কে জয় করে ফেলেছে। জনসভা, শোভাযাত্রা, মিছিলে যত বাধায় আসুক আমাদের নেতাকর্মীরা পিছপা হয় না, সেটা তারা প্রমাণ করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের ১৩ জন সহযোদ্ধা জীবন দিয়েছে। কিন্তু পিছপা হয়নি।

খসরু বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে অন্তরীণ। মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী ও তারেক রাহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জেলে দেয়া হয়েছে। এরপরও আন্দোলনে কি ভাটা পড়েছে? আন্দোলন থেমেছে নাকি বেড়েছে? অনেকগুণ বেড়েছে। এমনকি মহাসচিবকে জেলে দেয়ার পর লক্ষ লক্ষ জনতার ঢাকার মহাসমাবেশ সফল হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা ও গায়েবি মামলার মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নাই। কারণ এ আন্দোলনের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণ নিয়ে ফেলেছে। আন্দোলনের মালিকানা যখন জনগণ নিয়ে নেয় তখন সে আন্দোলনের প্রতিরোধ কেউ করতে পারবে না। সুতরাং বিএনপির নেতা যেই থাকুক তার পিছনে এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ এ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে সম্পৃক্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশের মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নেয় ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার সরকার সে যেই হোক তার থাকার কোনো সুযোগ নাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বিএনপির অন্য নেতারা যা বললেন
পরবর্তী নিবন্ধরাজপথেই জবাব দিতে পারে আওয়ামী লীগ