ঈদের ছুটিতে সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে চলুন

রশীদ এনাম | বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও, মানুষ ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও, মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও ভালোবেসে দাঁড়াওশক্তি চট্টোপাধ্যায়’। আহা মানুষকে আমি ফানুস হতেও দেখলাম। মানুষের মায়ামমতা, ভালোবাসার বন্ধন, আদরস্নেহ একে অপরকে সম্মান করা, সম্প্রীতি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিলীনের পথে। মানুষ কি আজ সত্যি রঙিন ফানুসে পরিণত হলো? জীবনে খারাপ সময় আসলে ভালোমানুষ চেনা যায়, আবার খারাপ মানুষও চেনা যায়। কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘একটা মানুষের মধ্যেই গোঁজামিল থাকে। কিন্তু যে সাপ সে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাপ। যে শিয়াল সে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিয়াল। মানুষ সাপও হইতে পারে, শিয়ালও হইতে পারে, পাখিও হইতে পারে। মানুষেরই বিভিন্ন চরিত্র নেওয়ার ক্ষমতা আছে। বুঝছো গ্রাম দেশে আগে সাপ আর শিয়াল পাওয়া যাইতো এগুলো নাই এখন। কারণ সাপ, শিয়াল এরা মানুষ হিসাবে জন্মাইতে আরম্ভ করেছে।’

মুসলমান সম্প্রদায়ের বছরে দুটো ঈদ একটা হলো ঈদুল ফিতর অন্যটি হলো ঈদ উল আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ খুশি। ঈদুল আজহার আল্লাহর উদ্দেশ্য পশু কোরবানি দেয়া।

টানা ১০ দিন লাগাতার ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন আনন্দ করতে। শিল্পী প্রফেসর সবিহ্‌ উল আলম স্যার বলতেন, আনন্দ শেয়ার করলে আনন্দ বাড়ে দুঃখ শেয়ার করলে দুঃখ কমে। বর্তমান সময়ে আমরা তাও করতে ভুলে গেছি। এমনকি আত্মীয়তা, সামাজিক বন্ধন একান্নবর্তী পরিবারের ভালোবাসা কেমন জানি মানুষের মন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমরা কেমন জানি হয়ে গেছি। কবি রবি ঠাকুরের গানের কথা মনে পড়ে, ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে।

গ্রামের বাড়িতে সবচেয়ে বেশি হয়। বিশেষ করে জমিজমা অর্থ সম্পদ স্বার্থ এবং পারিবারিক কলহ। দেখা যাবে সামান্য এক ফুট জায়গা কিংবা রাস্তার জায়গা এসব নিয়ে হরহামেশা ঘটে দাঙ্গাহাঙ্গামা। আবার দেখা যায় জমির মালিক সে নিজেও নয় তৃতীয় পক্ষের জমি নিয়ে এমন বিরোধ লাগে একেবারে গোষ্ঠীগোষ্ঠী কিলাকিলির মতো। বন্ধু আশুতোষ সুজনের আঞ্চলিক নাটকে দেখেছিলাম, সামান্য পথের দাবী টয়লেটের জায়গা নিয়ে মামাভাগিনা, ভাইবোনের মধ্যে তুমোল যুদ্ধ।

গত বছর দুয়েক আগে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ঈদুল আজহার সরকারি লম্বা ছুটিতে পাঁচদিনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ পাঁচদিনে নারী ও শিশু নির্যাতন বিয়ষে কল এসেছে ৪৯৩টি। দিনে হিসাবে প্রায় ৯৯টি করে। পারিবারিক নির্যাতন ১৭৬টি, হত্যার ২৭টি, যৌন হয়রানি ১৯টি ধর্ষণ ১০টি, ধর্ষণচেষ্টা ৯টি, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ৮টি, মাবাবার হাতে নির্যাতন ও প্রতিবেশি ৩টি ( ২০২৩ সালে পরিসংখ্যান) ইদানীং সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পারিবারিক কলহ, পূর্বসুত্রতার জের, এবং জায়গা জমির সংক্রান্ত। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবেন আনন্দ করতে যথা সম্ভব মারামারি হানহানি বিচার সালিশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। সমঝোতার মাধ্যেমে শান্তিপুর্ণ বৈঠক ডেকে বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করে ফেলুন জীবনটা দুদিনের আজকে মরলে কালকে দুই দিন। ক্ষমা করা মহত্তের লক্ষণ। আল্লাহ ক্ষমাশীল তাঁর প্রিয় বান্দাদের ক্ষমা করতে তিনি পছন্দ করেন। কারও দোষ না খুঁজে ক্ষমা করে দিন। ভুলবুঝাবুঝি নিরসন করুন মনে তৃপ্তি পাবেন, সুখ পাবেন আনন্দ অনুভুব করবেন দেখবেন ঈদের আনন্দ দুই বেড়ে দ্বিগুণ হবে। মনে রাখবেন দেওতা বড়ো নেওতা ছোট। ত্যাগেই সুখ ত্যাগেই আনন্দ। ঈদের ছুটিতে যেখানে সংঘাতসহিংসতা, অপরাজনীতি, মারামারি, হানাহানি, ভয়ভীতি, হুমকি ধামকি, দুষ্কৃতকারী দেখবেন সাথে সাথে আমাদের সেনা প্রশাসনের সহায়তা ও তরুণ সমাজকে নিয়ে রুখে দিন। আসুন আমরা সকলে বিরোধ মানঅভিমান ভুলে গিয়ে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করি। ঈদ মোবারক।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও সংগঠক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিরন্তন ত্যাগের প্রতীক
পরবর্তী নিবন্ধহাজার কোটি টাকার ঈদ অর্থনীতি