স্থানীয় সংকটগুলো মোকাবিলা করা গেলে শিল্পের সক্ষমতা বাড়বে

| বুধবার , ২৯ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালীন গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনাপরবর্তী সময়েও রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতির চিত্র বদলে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায় কৃচ্ছ সাধনের পথে হাঁটছে। সেই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে দেশের পোশাক রপ্তানিতে। একদিকে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে, এমনকি আগের দেওয়া অর্ডারও নিচ্ছে না। অন্যদিকে পোশাকের দাম কমাতে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। তার ওপর গ্যাসবিদ্যুতের সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিতে শিল্প মালিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে গড়িমসি করছে। সব মিলিয়ে চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে পোশাক শিল্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানির বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকে প্রভাবিত করেছে। এর পরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা যায় যা এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায়। বর্তমানে তৈরি পোশাক সেক্টর যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে: খারাপ কাজের পরিস্থিতি, শ্রম অসন্তোষ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও চাকরি হারানো, প্রতিদ্বন্‌দ্বী দেশগুলির কাছ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং কমপ্ল্যায়েন্স মেনে চলার জন্য বিদেশী ক্রেতাদের চাপ। যে শর্তগুলি তৈরি পোশাক শিল্পের উত্থানে অবদান রেখেছিল তা বর্তমানে হুমকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে আরএমজি সেক্টর যে কারণে উন্নতি লাভ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে অনুকূল নীতি, সরকারী সমর্থন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণ, যেমন মাল্টিফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্ট (এমএফএ) কোটার মাধ্যমে এই সেক্টরে রেন্ট তৈরি করা (এখন আর নেই) এবং জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (এঝচ); বিভিন্ন ভর্তুকি সুবিধা; কর ছাড়; একটি রক্ষণশীল শ্রম শাসনের ভেতর ব্যবসা; এবং আইনি এবং বেআইনি উভয় প্রকার জগএ ব্যবসা। বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে আর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে বিবেচনা করা হবে না। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করতে হবে। এদিকে, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদায় এখন ভাটার টান। গত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি বাড়লেও কমে গেছে প্রবৃদ্ধি। দুই বাজারে নতুন রপ্তানি আদেশের গতিও তেমন নেই। আগামীতে রপ্তানি আদেশ বাড়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এ বাস্তবতায় উদ্বেগ বাড়ছে রপ্তানিকারকদের। একাধিক কারণে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। এর মধ্যে বেশি ভোগাচ্ছে রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে পশ্চিমা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে দেশে গ্যাসবিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ার ফলে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পোশাকের ফ্যাশনে থাকে খরা মৌসুম। এ সময় বাজারে ভোক্তা চাহিদা থাকে তুলনামূলক কম। বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশের মতো। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৫৬১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫৭৭ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বাজার। রপ্তানি কমার কারণে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ এখন ১৮ শতাংশেরও কম। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ২১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির মূল্যস্ফীতি এখন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ২৭ দেশের জোট ইইউর পরিস্থিতিও একই রকম। এ কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা নেই অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদের।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকার এই শিল্পকে পলিসি সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ সাপোর্ট না দিলে শিল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা বলা মুশকিল। শিল্পের স্বার্থে শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা জরুরি।এতে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, যার সুফল সবাই পাবে। তাঁরা বলেন, বৈশ্বিক মন্দার মতো আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে আমরা চাইলেও করতে পারব না। কিন্তু দেশে সংকটগুলো যেমন গ্যাসবিদ্যুতের ঘাটতি এবং ব্যবসা সহজীকরণের মতো পদক্ষেপগুলো নিতে পারি। স্থানীয় সংকটগুলো মোকাবিলা করা গেলে শিল্পের সক্ষমতা বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে