শুরু হচ্ছে হংকং-চট্টগ্রাম নতুন রুটের যাত্রা

চীন হয়ে জাহাজ চলবে, থামবে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে ।। আমদানি নির্ভর রুট, রপ্তানিতে কাজে লাগানোর পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেন যুদ্ধ ও কলম্বো বন্দরের সংকটে চাপে থাকা দেশের শিপিং সেক্টরে আজ থেকে হংকং-চট্টগ্রাম নতুন রুটের যাত্রা শুরু হচ্ছে। হংকং থেকে চীন হয়ে এই রুটে জাহাজ চলাচল করবে। নোঙর করা হবে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন রুট তৈরি হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন এই রুট পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। হংকং-চীন-চট্টগ্রাম রুটকে রপ্তানি বাণিজ্যের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, এতে দেশের সার্বিক অর্থনীতি লাভবান হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী কন্টেনার পরিবহন বাড়ছে। বাড়ছে কন্টেনার জাহাজের চলাচল। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বেশিরভাগই পরিবাহিত হয় কন্টেনারে। বিশ্বের যেকোনো দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠাতে চট্টগ্রাম থেকে কন্টেনারে পাঠাতে হয় সিঙ্গাপুর, কলম্বো বা মালয়েশিয়ার বন্দরে। একইভাবে আমদানি পণ্যও ওই ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে চট্টগ্রামমুখী জাহাজে চড়ে। এই তিনটি বন্দরের বাইরে ২০১১ সালে চীনের সাথে চট্টগ্রামের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে চীন-চট্টগ্রাম সার্ভিস চালু করেছিল প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইন (পিআইএল)। বেশ কিছুদিন চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো সার্ভিস চালু হয়নি। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে চলতে থাকে।

পরবর্তীতে একে একে তিনটি কোম্পানি চীনের সাথে চট্টগ্রামের জাহাজ চলাচল শুরু করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম-চীন রুটে ড্যানিশ কোম্পানি এমসিসি, হুন্দাই-সিনোকর সার্ভিস এবং এসআইটিসি-সিএমএ জাহাজ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে হুন্দাই সিনোকর কোরিয়াকেও এই রুটে যুক্ত করে। এতে করে কোরিয়া ও চীনের সাথে চট্টগ্রামের কন্টেনার জাহাজ চলাচল করছে। তবে এই রুটটি পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। তৈরি পোশাকের কাঁচামালসহ চীন থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্য এই রুটে পরিবাহিত হয়। উপরোক্ত তিনটি রুটের পাশাপাশি আজ থেকে এমএসসি নতুন রুটের সূচনা করতে যাচ্ছে। নতুন এই রুটে হংকংকে যুক্ত করা হচ্ছে। এই কোম্পানির জাহাজ হংকং থেকে যাত্রা করে চীনের ইয়ানতিয়ান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার তানজুন পেলেপস হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। এতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। তবে হংকং যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে চট্টগ্রামের সাথে চীনের পাশাপাশি কোরিয়া ও হংকংয়েরও সরাসরি সার্ভিস শুরু হলো।

জাহাজগুলো পুরোপুরি আমদানি পণ্য নির্ভর। চীন, হংকং কিংবা কোরিয়া থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পথে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকেও পণ্য নেয়া হয় জাহাজগুলোতে। এই আমদানি রুটটিকে রপ্তানি পণ্যবাহী রুটে পরিণত করা গেলে বিকল্প একটি রুট তৈরি হতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও হংকংয়ে বাংলাদেশের তেমন কোনো রপ্তানি পণ্য থাকে না। এতে করে ফিরতি পথে এই জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার পায় না। খালি কন্টেনার নিয়েই যাত্রা করে। এই জাহাজগুলোতে সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ার তানজুন পেলেপস বন্দরের জন্য রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার দেয়া যায়।
চীন-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম জাহাজ পরিচালনাকারী পিআইএলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ জহির গতকাল আজাদীকে বলেন, চীনের সাথে চট্টগ্রামের সরাসরি জাহাজ চলাচল আমদানি নির্ভর। এটিকে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের রুট করা গেলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি লাভবান হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তার মতে, সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে জাহাজগুলো চলাচল করছে। এতে সহজে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার পরিবহন করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬