ধৈর্য ধরুন, টিকা পাবেন : প্রধানমন্ত্রী

অনির্দিষ্টকাল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়

| বৃহস্পতিবার , ২৪ জুন, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ টিকার অপর্যাপ্ততা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের ধৈর্য ধরে সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা সমালোচনা করছেন, তাদের বলব একটু ধৈর্য ধরেন। তারপর দেখেন আমরা কতটুকু কী করতে পারি। তারপর সমালোচনা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গতকাল বুধবার আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মহামারীকালে গণভবনে থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই সভায় যুক্ত হন তিনি। এর আগে নবম মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় অনির্দিষ্টকালের জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারীর বছর গড়ানোর পর অন্য অনেক দেশের আগে সরকার দেশে গণটিকাদান শুরু করে। কিন্তু টিকা সঙ্কটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে, যা নিয়ে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশ যেখানে এখনও টিকা দেওয়া শুরু করতে পারেনি, সেখানে তার সরকার আগে পদক্ষেপ নিয়েছিল বলে তা শুরু করা গেছে পাঁচ মাস আগে। ভারতে যখন মহামারী ব্যাপকভাবে শুরু হল, তারা ভ্যাকসিন রপ্তানি করা বন্ধ করে দেওয়াতে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা এখন আবার ভ্যাকসিন কিনতে শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।
সমালোচকদের নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার খুব দুঃখ লাগে, যাদেরকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগেভাগে ভ্যাকসিন দিয়েছি, দুই ডোজ দেওয়ার পর তারা এখন সমালোচনা করে। অথচ তারাই কিন্তু সবার আগে নিয়েছে। তারাই আবার বড় বড় সমালোচনার কথা, একে গালি ওকে গালি, অনেক কিছু দেন, আমরা শুনি। তারা যখন (টিকা) নিয়েছিলেন, তখন তো এই কথা বলেননি। এখন আবার সমালোচনা কেন?
বিশ্বজুড়েই যে টিকার সঙ্কট, তা সমালোচকদের বোঝার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে ভ্যাকসিন আমরা ৪ ডলারে কিনেছি, এখন তা ১৫ ডলারে কিনতে হচ্ছে। সামনে হয়ত আরও বেশি দাম হবে। আমরা তো আগেই টাকা দিয়ে, পয়সা দিয়ে সব চেষ্টা করে রেখেছিলাম।
বাংলাদেশে যেন ভবিষ্যতে করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরি করা যায়, সেই ব্যবস্থাও সরকার করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যেন নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি, তার জন্য আমাদের ফার্মসিউটিক্যাল তৈরি করা দরকার। আমরা কীভাবে এখানে ভ্যাকসিন করব, তার উপর আমরা গবেষণা করে ইন্সটিটিউট তৈরি করে আমরাও যেন ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি, তার জন্য যা যা দরকার, আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।
করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এখনও সবচেয়ে ভালো স্থানে রয়েছে বলে দাবি করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন কোনো ম্যাজিক না। এটা আমাদের পরিকল্পনা। এটা আমাদের একটা দর্শন, একটা আদর্শ।
অপরদিকে গতকাল নবম মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষের বঞ্চনা বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ যদি আমরা নিতে না পারি, সবার জন্য শিক্ষা ও বিকাশের পরিবেশ যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
বলপূর্বক বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব সমপ্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কঙবাজারে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি হচ্ছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে অনির্দিষ্টকাল এভাবে আশ্রয় দিয়ে রাখা সম্ভব না। বিশ্ব সমপ্রদায়কে তাই আমি অনুরোধ করব, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আমাদের সহযোগিতা করুন।
জলবায়ু সঙ্কটকে বর্তমান সময়ের আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ব সমপ্রদায়ের ‘যথাযথ মনোযোগ’ দেওয়া প্রয়োজন। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। অথচ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাংলাদেশ তার একটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকল্প বাস্তবায়নে সব অন্তরায় চিহ্নিত করার উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় ঘুমন্ত শিশু নিহত