দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হিমু যা বললেন

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কে দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুইজন শিক্ষার্থী মারা যান, আহত হন জাকারিয়া হিমু। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন কিছুটা সুস্থ। ফেসবুকে পাওয়া এক ভিডিওতে সেদিনের সেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে দেখা যায় তাকে। সেদিনের স্মৃতি বলতে বলতে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। জাকারিয়া হিমু ভিডিওতে বলেন, ‘সেদিন দুপুরে তৌফিককে ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে অনেক ছবি তুলে দিলাম, আমিও তুললাম। মোবাইলে সেই ছবি এখনো আছে। তখনো ভাত খাইনি। তাই চুয়েট গেটের বাইরে খাওয়াদাওয়া করার জন্য যাবো বলে বের হলাম দুজন। একমিনিটের মধ্যেই সেখানে গিয়ে দেখলাম শান্ত ভাই বাইক নিয়ে আসছে। শান্ত ভাই আমাদের বলে, হলে যাবি না, পেছনে ওঠ। আমি উঠছি মাঝখানে, তৌফিক ছিলো পেছনে। শান্ত ভাই বাইক চালাচ্ছে, তৌফিক বলল খাওয়া দাওয়া করছো? শান্ত বলে, না করিনি। তারপর তৌফিক বলল, চল ভাই গেটের বাইরে খাওয়াদাওয়া করে আসি। এরপর গেটের বাইরে যাই আমরা। যাওয়ার পর শান্ত ভাই বলে, চল গোডাউন থেকে ঘুরে আসি। বাইক তো সহজে পাই না। আমরা বলি চলেন ভাই। পুরো সড়কজুড়ে আমরা অনেক হাসাহাসি করেছি। শান্ত ভাই ঠিকমতো গাড়ি চালাচ্ছিল। অনেক রোদ ছিল, ততক্ষণে আমরা শান্তিরহাট পৌঁছে যায়। তখন আমি বলি, গোডাউনে যাবো না, অনেক রোদ। তখন শান্ত ভাই শান্তিরহাট থেকে গাড়িটা ঘুরিয়ে ফেলেন। গাড়ি ঘুরানোর পর তৌফিক বলল, ভাই এবার আমি চালাই। তখন শান্ত ভাই বলল, সামনে দেবো। আসার সময় আমি ছিলাম পেছনে, তৌফিক মাঝখানে আর শান্ত ভাই গাড়ি চালাচ্ছিল। কিছুদূর আসার পর হঠাৎ ৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটি চলন্ত বাস… (বলেই কেঁদে ওঠেন জাকারিয়া হিমু) বাইকের সাথে এসে লাগলো। শান্ত ভাই পড়ে যায় সামনে, মাথা একেবারে রক্তাক্ত, আমি মাঝে পড়েছিলাম। উঠে দাঁড়িয়েছি। তৌফিকের অবস্থা দেখে আমার মাথা কাজ করছিলো না, বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। তৌফিক ফোনটা বের করে ওর আম্মুরে ফোন দেয়। বলছে, মা আমার হাত পা সব ভেঙে গেছে। ওই অবস্থায় ৫১০ মিনিট ছিলাম। সিএনজি করে শান্ত ভাইকে নিয়ে গেছে। আমাকে আর তৌফিককে নিয়ে গেছে নোয়াপাড়া পাইওনিয়ার হাসপাতালে। সেখানে তখন চুয়েটের আমার বড়ছোট অনেক সহপাঠীকে দেখি। নোয়াপাড়া পাইওনিয়ার হাসপাতাল থেকে চুয়েটের অ্যাম্বুলেন্স করে কাপ্তাই রাস্তারমাথা পর্যন্ত আসার পর তৌফিক বলে, ভাই আমার সময় শেষ। এরপর হাসপাতালে আসার পর দুইজনকে দুই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শুনি তৌফিকও মারা গেছে।’ এসব বর্ণনা দিতে দিতে চিকিৎসাধীন জাকারিয়া হিমু কান্নায় ভেঙে পড়ে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১) নিহত হন। আহত হন একই বিভাগের জাকারিয়া হিমু (২১) নামে অন্য একজন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় মোটরসাইকেলের সাথে বেপরোয়া গতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি যাত্রীবাসী বাসের সংঘর্ষ হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েট ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ খোলা থাকবে হল
পরবর্তী নিবন্ধচেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী নেই