চুয়েট ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ খোলা থাকবে হল

সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ফের আন্দোলনের চেষ্টা শিক্ষার্থীদের

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আগামী ৯ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চুয়েটের ১৩৩তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে সিন্ডিকেটের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সিন্ডিকেটের সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ৯ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা শান্তিশৃক্সখলা বজায় রেখে হলে অবস্থান করতে পারবেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এদিকে সিন্ডিকেট সভার এই সিদ্ধান্তের পর ফের উত্তপ্ত অবস্থা দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে। রাত সাড়ে ৭টা থেকে মূল ফটকে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। মূল ফটক বন্ধ করে ক্যাম্পাসের ভেতর শহীদ মিনার চত্বরে সংগঠিত হলেও সড়কে নামেননি শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের সাথে কথা বললে শিক্ষার্থীরা হলে ফেরত যান। এরমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীকে ব্যাগ নিয়ে হল ছাড়তে দেখা যায়। আবার অনেকে আজ (শনিবার) হল ছাড়বেন বলে জানা যায়।

এই বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার খবরে আমরা গিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। তখন তারা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সবাই যার যার মতো করে চলে যাবে। তাই সার্বিক বিষয় নিয়ে সিনিয়রজুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আলোচনা করছিলো। এটা আন্দোলন কিংবা অন্য কিছু বলা যাবে না।’

এদিকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ফের আন্দোলনের চেষ্টা করার বিষয়টিতে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। চুয়েট সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, চুয়েট প্রশাসনের মধ্যকার একটি অংশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে নিরাপদ সড়ক দাবির মতো একটি যৌক্তিক ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য আন্দোলনকে ইন্ধন দিয়ে প্রশাসনবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিয়েছেন। যেহেতু বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষদিকে, তাই এই আন্দোলনকে পূঁজি করে পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার স্বপ্নে বিভোর শিক্ষকদের একাংশ এসবের নেপথ্যে কাজ করছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিকট তথ্য রয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চারদিনব্যাপী আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছিলো চুয়েট কর্তৃপক্ষ। একইসাথে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেয়। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের কক্ষসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা দিয়েছিলেন। এতে আটকা পড়েন চুয়েটভিসিসহ শিক্ষককর্মচারীরা। এছাড়া দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে রাত আটটা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আন্দোলনকারী ২০ শিক্ষার্থী বৈঠকে অংশ নেন। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় তারা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালককে গ্রেপ্তার করার দাবি পূরণ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিল গঠন করবে, যেখানে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, সব শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীরা সহযোগিতা করবেন। তাছাড়া চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই সড়কটি প্রশস্ত করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন তারা। এসব দাবি পূরণ কিংবা আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধের মাথা বিচ্ছিন্ন
পরবর্তী নিবন্ধদুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হিমু যা বললেন