দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ বিশেষ

ফারজানা আজিম | শনিবার , ১ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

বিবাহ ‘পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও বৈধ প্রথা যা, যুগ যুগ ধরে মানবজাতির বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাহায্য করে চলেছে। বিয়ে হল এমন একটি সামাজিক বন্ধন যাতে দুইটি মানুষ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।

বিভিন্ন দেশে সংস্কৃতি ভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সাধারণভাবে বিবাহ এমন একটি রীতি বা প্রথা যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে।

সেই আদিম যুগের গুহাবাসী পূর্বপুরুষ থেকে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক সমাজেও পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম ও বৈধ প্রথা বিয়ে যা মানবজাতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে।

বিবাহ মানব জীবনের এমন একটি প্রথা যার ধ্বংস হয়নি বা বিলোপ সাধন করতে পারেনি। যদিও আধুনিক সমাজে বিবাহ নিয়ে নানা বিরোধী মতবাদ বা নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে তার পরেও আপন মহিমায় বিবাহ প্রথা আজও টিকে আছে এবং থাকবে ততদিন যতদিন পৃথিবী আছে ততদিন তা টিকেও থাকবে।

বিয়েতে নারীর দেনমোহর : দেনমোহর হলো কিছু টাকা বা কোনো সম্পত্তি যা বিবাহ চুক্তির একটি শর্ত হিসেবে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী পাওয়ার অধিকারী হয়। দেনমোহর স্বামীর জন্য ঋণ। আমাদের সমাজে অনেকেই ভুলবশত ভেবে থাকেন যে, তালাক দিতে গেলেই কেবল দেনমোহর দিতে হয়। তাই বিয়ের সময় সামর্থের বাইরে গিয়েও দেনমোহর ধার্য করা হয়ে থাকে যাতে দেনমোহর পরিশোধের চাপে পড়ে বিবাহ বিচ্ছেদ না হয়। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। দেনমোহর তালাকের সাথে সম্পর্কিত নয়। দেনমোহরের সম্পর্ক মূলত বিয়ের সাথে।

বিয়ের শর্ত অনুযায়ী দেনমোহর একটি শর্ত। দেনমোহর বিয়ের সময় দিতে হয়। দেনমোহরের জন্য কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত নাই। স্বামী সামর্থ্যের বাইরে ও তা নির্ধারিত হতে পারে, তবে উভয়পক্ষকে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। দেনমোহর একবার নির্ধারিত হয়ে গেলে তা স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ বিশেষ। তাই স্বামী অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিবেচনায় তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিয়েতে দেনমোহর আবশ্যক বিষয়। এটা শুধু লোক দেখানো বা শুধু লেখার জন্য নয়, ইসলামে মোহর মুক্ত কোনো বিয়ের অস্তিত্ব নেই। কেননা মোহর বিয়ের জন্য আবশ্যকীয় বিধানের একটি।

সুতরাং, যথাসময়ে এসব পূরণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে দেনমোহর আদায়ের বিষয়ে এরশাদ হয়েছেন, ‘তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্ট চিত্তে মোহর প্রদান কর।’ দেনমোহরের বিষয়টি হালকা ভাবে নিয়ে লোক দেখানো “অধিক মোহর” ধার্য করাতেও কোন মঙ্গল বা বরকত নাই বরং তা অহংকারের পরিচয়ক। বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে অর্থাৎ যে বিয়েতে কম খরচ হয় এবং কোন ঝাঁকজমক থাকে না’। (মিশকাত শরীফ)। সুতরাং, কুরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় দেনমোহর পুরুষের উপর স্ত্রীর ঋণ এবং এটা আদায় করা ওয়াজিব। এমনকি স্ত্রী আগে মারা গেলেও দেনমোহর মাপ হবে না। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহরের হকদার।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে এই দেনমোহরের প্রতি অনীহা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিন দিন লোক দেখানো দেনমোহর যতই বাড়ছে ততই দেনমোহর প্রদানের ইচ্ছা ও সামর্থ্য দুটোই কমেছে। ফলে বিয়েগুলো আর বরকতময় থাকছে না। যার কারণে সমাজে দাম্পত্য কোলাহল ও বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণও বাড়ছে। এইদিকে দৃষ্টি দেওয়া খুবই প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু রোধ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা