চট্টগ্রামে টাইগারদের স্মরণীয় জয়

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারাল ৬ উইকেটে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি মাত্র টিটোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেটা ২০২১ সালের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সে ম্যাচের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর ছিলনা টাইগারদের জন্য। কারণ ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ ৮ উইকেটে। প্রথমবারের মতো টিটোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে টিটোয়েন্টির দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। আর সে সিরিজের শুরুটা করল টাইগাররা জয় দিয়ে। বলা হয়ে থাকে টিটোয়েন্টি ক্রিকেটটা ঠিকমত রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু গতকাল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বিপক্ষে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল বাংলাদেশ। আর তাতেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জয় স্বাগতিকদের।

ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছিল তামিমরা হোয়াইট ওয়াশের খড়গ মাথায় নিয়ে। সে খড়গের নিচ থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনেছে চট্টগ্রাম। দেশের ক্রিকেটের লাকি ভেন্যুতে এসে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে দীর্ঘ ৯ বছর পর হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা থেকে রেহাই পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের সে ধারা বজায় রেখেছে টাইগাররা টিটোয়েন্টি সিরিজেও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টিটোয়েন্টি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় তিন ম্যাচের টিটোয়েন্টি সিরিজে এগিয়েও গেল স্বাগতিকরা। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগারদের জয় ৬ উইকেটের। ইংল্যান্ড শুধু টিটোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নই নয়। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে রাজত্ব করা সেরা সব ক্রিকেটাররাও এই দলে। এমন একটি প্রতাপশালী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের তরুণরা লড়েছে একেবারে বুক চিতিয়ে। আর তাতেই এলো স্মরণীয় জয়। আর এই জয়ে প্রথম সিরিজে এগিয়ে থাকল টাইগাররা। প্রথম সেশনে বোলার এবং ফিল্ডারদের দায়িত্ববোধটা যেন পরের সেশনে ব্যাটারদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল। তাইতো দলের টপ অর্ডার এমন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে জয় তুলে নিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে, হোকনা সেটা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টিটোয়েন্টি। এমন সুন্দর দিন খুব কমই এসেছে। যেটি গতকাল উপহার দিল টাইগাররা চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তুলে নিল ঐতিহাসিক এক জয়।

টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু তার সিদ্ধান্তকে যেন ভুল প্রমাণ করতে চলছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্ট এবং জস বাটলার। দুজন মিলে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। উদ্বোধনী জুটিতে তুলে নেন ৮০ রান। অবশ্য সে জুটি ৪৮ রানের মাথায় ভাঙতে পারতো। কিন্তু নাসুমের বলে ক্যাচটি নিতে পারেননি সাকিব। তখন বাটলারের রান ছিল মাত্র ১৮। সে বাটলার শেষ পর্যন্ত করেন ৬৭ রান। যদিও ৩৮ রান করা সল্টকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন নাসুম। ৮ রান পর ডেভিড মালানকে ফেরান সাকিব। এই ব্যাটিং দানব করেন মাত্র ৪ রান। বেন ডাকেটকে নিয়ে আবারো এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বাটলারের। ৪৭ রান যোগ করেন দুজন। এজুটি ভাঙ্গেন মোস্তাফিজ। তিনি ফেরান ১৩ বলে ২০ রান করা ডাকেটকে। পরের ওভারে বল করতে এসে জস বাটলারকে ফেরান হাসান মাহমুদ। ৪২ বলে ৬৭ রান করেন এই ইংলিশ ওপেনার। মেরেছেন ৪টি করে চার এবং ছক্কা। প্রথম দশ ওভারে ৮০ রান তুলে নেওয়া ইংলিশদের রানের লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফলে শেষ দশ ওভারে ইংলিশরা যোগ করতে সক্ষম হয় ৭৬ রান। আর তাতে ১৫৬ রানে থামে ইংলিশরা। বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ নিয়েছেন ২টি উইকেট। বাকি বোলারদের সবাই নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

১৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে ঝড় দুই টাইগার ওপেনারের। ২০১৫ সালে একটি মাত্র টিটোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পর আবার দলে জায়গা পাওয়া রনি তালুকদার যেন বিপিএলের ব্যাটিংটা মনে করে দিচ্ছিলেন। যদিও বেশিক্ষণ তিনি স্থায়ী হতে পারেননি। ৩৩ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুই ওপেনার। রনি ফিরেছেন ১৪ বলে ২১ রান করে। মেরেছেন চারটি দৃষ্টিনন্দন চার। দশ রান পর ফিরেছেন লিটন দাশও। রানের খরায় ভুগতে থাকা লিটন ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত হাসাতে পারলেন না নিজের ব্যাটকে। ১০ বলে ১২ রান করে ফিরেছেন অর্চারের বলে ওকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর দলকে টেনেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং প্রথমবারের মত দলে জায়গা পাওয়া তৌহিদ হৃদয়। ৩৯ বলে ৬৫ রান যোগ করেন দুজন। নিজের অভিষেকটাকে খুব বেশি রাঙাতে না পারলেও ১৭ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে ফিরেন তৌহিদ হৃদয়। এরই মধ্যে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। ওয়ানডে সিরিজে দুটি হাফ সেঞ্চুরির পর টিটোয়েন্টি সিরিজেও তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু নিজের ইনিংসটাকে আর বাড়াতে পারলেন না শান্ত। ফিরেছেন মার্ক উড়ের বলে বোল্ড হয়ে। তার আগে করেছেন ৩০ বলে ৫১ রান। মেরেছেন ৮টি চার। এরপ অধিনায়কের সাথে জুটি বাধেন আফিফ হোসেন। দুজন মিলে কোন সুযোগই দিলেন না ইংলিশ বোলারদের। দুজন মিলে ৩৪ বলে ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এনে দিল ঐতিহাসিক এক জয়। সাকিব অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ৩৪ রান করে। আর আফিফ অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ১৫ রান করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বিনামূল্যে চাল পাবে ১ লাখ ৮০ হাজার পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধসেই ফোরকান আবার জেনারেল হাসপাতালে