আয়োজনে বিভাজন ও সেকেলে আমি

জেবারুত সাফিনা | মঙ্গলবার , ২৭ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কুরবানী ঈদের সাথে সিন্নির গোস্ত আর চাউলের রুটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কুরবানি ঈদের আগের দিন শেষ বিকেলে প্রায় প্রতিটি গেরস্থবাড়ীর হেঁশেলের দৃশ্য একইরকম ছিলো। তখনকার একান্নবর্তী পরিবারের ঈদআয়োজনে চাউলের রুটি ছাড়া কুরবানী ঈদ জমতো না। এ রুটি বানানোর টেকনিক সবাই জানতোও না। চুলায় ফুটন্ত পানিতে চাউলের গুঁড়ো কমবেশি হলে এ রুটি একেবারে বরবাদ হয়ে যেতো। এজন্য দক্ষ হাতে রুটির মন্ড তৈরি করে এরপর সদলবলে মায়ান করা হত ময়দা সহযোগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলাগাছের বাকলের (কান্ডের মতো) সাইজের সাদা সাদা বেশ কয়েকটি মন্ড তৈরি হয়ে যেতো এবার লেচি কাটার জন্য দু তিন গাছি সুতো একত্রিত করে পায়ের বুড়ো আঙুলে পেঁচিয়ে আরেক প্রান্ত হাতে ধরে লেচি কেটে নিয়ে সেগুলো ময়দায় গড়িয়ে দুজন পিঁড়িতে বসে যেতো রুটি গড়তে আর একজন মাটির উনুনে লাকড়ির জ্বাল তুলে লোহার তাওয়ায় রুটি সেঁকে বড় চালুনিতে ছুঁড়ে দিত। কমপক্ষে পাঁচ, ছয়জনের একটি দল এ কাজে নিয়োজিত না হলে এ রুটি বানানো একেবারে দুঃসাধ্য ছিলো। সিন্নির মাংসের সাথে এ রুটির স্বাদ অসাধারণ এটি যারা একবার খেয়েছেন তারা বলতে পারবেন। তবে,এখন সেই রুটি গড়ার মহিলা কারিগর নেই বললেই চলে। তখনকার দিনে প্রতি পাড়ায় পাড়ায় এদের কদর ছিলো। ঈদের চার পাঁচ দিন আগেই তাদের বলে আসতে হত। পারিশ্রমিক ছাড়াও তাদের চা- নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করা হত। কুরবানী ঈদে সবার ঘরে ঘরে একটাই মেন্যু “সিন্নির গোস্ত ও চাউলের রুটি”- কিন্তু এখনকার পরিবর্তনগুলো আমার ভালো না লাগলেও আমি এটি বুঝতে পারি আমার দিন শেষ, আমি বড্ড সেকেলে অন্তত স্বাদের দিক থেকে। এখনকার কুরবানী ঈদে পোলাও, কোর্মা, বিরাণী,কাবাব – এসব করি কিন্তু সেই মজা, সেই ছোট বড়, কাঙ্গাল,মিন্নতি (যারা কশাই কাজ করেন), আত্মীয়, পড়শী – সবারই ওই একটাই মেন্যু কুরবানির দিনে, তা যেনো মানুষে মানুষে বিভাজনের বেড়াজালে একেবারে হারিয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ কি অপরূপা রূপ বর্ষা তোমার
পরবর্তী নিবন্ধবলতে না পারার কষ্ট