এ কি অপরূপা রূপ বর্ষা তোমার

সৌভিক চৌধুরী | মঙ্গলবার , ২৭ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বর্ষার রূপ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘আজ বরষার রূপ হেরি মানবের মাঝে চলেছে গরজি, চলেছে নিবিড়ভাবে। হৃদয়ে তাহার নাচিয়া উঠেছে ভীমা, ধাইতে ধাইতে লোপ করে চলে সীমা’। তাঁর এ ভাবনা মানুষের মাঝে বর্ষার উপলব্ধিকে নাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। বর্ষা মানুষের অন্তরকে দোলায়িত করে, নিয়ে যায় ছন্দময় কল্পনার বিচিত্র জগতে। ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষা শুধু সাধারণ ঋতু নয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর জলস্বল্পতায় জলাশয়গুলোর যখন করুণ অবস্থা, সেই সময় বর্ষার আগমন যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে এ বসুন্ধরায়, এক শীতল পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে। সাদা হলুদ মেশানো কদম ফুলের সমারোহে বর্ষা যেন ফিরে পায় তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। বর্ষার জলধারায় সিক্ত হয়ে অনেকেই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যান। বর্ষণমুখর দিনগুলো আমাদের চেতনাকে বিভিন্নভাবে শাণিত করে। বর্ষা যে শুধু এই ধরণীতে সজীব, স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করে তাই নয়, মেঘবৃষ্টির সখ্যতায় প্রকৃতি সেজে ওঠে এক অপরূপ সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধতায়। এই বর্ষা ঋতুর জন্যেই বৃক্ষরাজি যেন উন্মুখ হয়ে থাকে, বৃষ্টির জলস্পর্শে গাছগুলো ফিরে পায় প্রাণ, যেন এক সজীব অনুভূতি। বর্ষার চিরাচরিত আগমনে খরায় চৌচির শুকনো মাটি তার হাহাকার ঘুচিয়ে প্রাণময় হয়ে ওঠার প্রয়াস পায়। ফসলাদি হয়ে ওঠে সজীব, সতেজ। অতি বর্ষার কারণে জলস্ফীতি সৃষ্টির ফলে মানুষের দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। বন্যার ফলে নতুন পলিতে ফসল চাষে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সুযোগ তৈরি হয়। অনেক কষ্ট ধারণ করে মানুষ এগিয়ে যায়। গৃহবন্দি হয়ে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়। সব কিছু ছাপিয়ে আষাঢ়- শ্রাবণে মেঘের গুরু গম্ভীর পরিবেশে বর্ষার আয়োজনে এ যেন এক প্রেমময় চিত্রের অবতারণা হয়। মেঘের পরে যখন মেঘ জমে যায় তখন প্রেমিকার একা বসে থাকার আর অবকাশ থাকে না, যেতে হয় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, কবিও তার কল্পনার জাল বুনতে বুনতে হারিয়ে যান বর্ষার গহণ সান্নিধ্যে, যেখানে প্রেম আর প্রকৃতি বিলীন হয়ে যায় এক অপরূপ ব্যঞ্জনায় ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমশা নিধনের জন্য স্থায়ী কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধআয়োজনে বিভাজন ও সেকেলে আমি