আগামী নেতৃত্ব কেমন হবে সেটিই বড় কথা

দক্ষিণ জেলার সম্মেলনে যুবলীগ চেয়্যারম্যান পরশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৯ মে, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল, বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যুবলীগের নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন সম্মেলনস্থলে। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে পটিয়ায় আট উপজেলার ছাত্র ও যুবকদের ঢল নামে। সকাল ১০টার আগেই সম্মেলনস্থল পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে পটিয়া থানার মোড়, বাসস্টেশন পর্যন্ত ছড়ায়।
উৎসবমুখর পরিবেশে স্লোগানে মুখ হয় সম্মেলন প্রাঙ্গণ। সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে বজ্রসহ ভারী বর্ষণের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এরপর উৎসাহ-উদ্দীপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীত শেষে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি যুবলীগের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলন যুবলীগের একটি সোনালি অধ্যায় হয়ে থাকবে। আজ যুবলীগের সম্মেলনে নেতৃত্বে কে আসবে সেটি বড় কথা নয়, বরং আগামী নেতৃত্ব কেমন হবে সেটিই হচ্ছে বড় কথা। এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন এই বাংলাদেশ তালেবান হবে না, শ্রীলঙ্কা হবে না। হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে দুটি পক্ষ রয়েছে। তাদের একটি পক্ষ দেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায়। অন্য পক্ষ শ্রীলঙ্কা বানাতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার যতদিন থাকবে ততদিন তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। যুবলীগ যদি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের গল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যায়, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের অস্তিত্ব থাকবে না।
তিনি বলেন, শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উর্বর এই চট্টগ্রামের মাটি। জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলস, এলআরবি, নগর বাউল, রেনেসা-এই সবকিছুর জন্ম এই চট্টগ্রামের মাটিতে। চট্টগ্রাম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। শুধু ঐতিহ্য নয়, চট্টগ্রাম প্রগতিশীলতারও ধারক ও বাহক। চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে সুদৃঢ় দেশপ্রেম রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অদম্য শক্তি কাজ করে। চট্টগ্রামের বিপ্লবী ঐতিহ্য রয়েছে। এই মাটি প্রতিবাদী মাটি, এই মাটি কখনো অন্যায়, অবিচার এবং মিথ্যাচার বরদাশত করে নাই।
জনগণের ভালো লাগা ও গর্বের জায়গা পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি-জামায়াত অসন্তুষ্ট মন্তব্য করে শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, পদ্মা সেতু আজ তৈরি হয়েছে। লোন নিয়ে নয়, নিজ অর্থে এই সেতু করা হয়েছে। তিনি বলেন, সম্মেলনে দেশপ্রেমিক কর্মীবান্ধব জনদরদি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। আপনারা গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন, যে নেতৃত্ব সৎ ও মানবিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবে। আগামী নির্বাচনে সবাইকে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে মেধাসম্পন্ন সুদৃঢ় নেতৃত্ব দরকার। কে হবে নেতা, তার চেয়ে বড় কথা নেতৃত্ব কেমন হবে? পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার।
তিনি আরও বলেন, এক অদৃশ্য কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোয়ারের সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণে দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল। যোগ্য নেতৃত্বে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ স্বাধীনতাবিরোধীদের ভয় পায় না। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী যুবলীগকে মাঠে ও মানুষের পাশে থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে আমাদের যুবলীগ কাজ করে যাবে।
দলীয় নেতাকর্মী যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে পরশ বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দলের কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিতে কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। দলের কেউ দুর্নীতি করলে সে যেমন ছাড় পাচ্ছে না তেমনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছাড় দেয়া হয়নি।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দিন, সহসম্পাদক নাসির উদ্দিন মিন্টু, কার্যনির্বাহী সদস্য কায়কোবাদ ওসমানী, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মঈনুল ইসলাম মামুন, মো, মুনায়েম খান, এসএম রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ও রেজাউল করিম বারী। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ দ্বিতীয় অধিবেশন : বিকাল সাড়ে ৫টায় পটিয়ার হল টুডে নামে একটি কনভেনশন সেন্টারে দ্বিতীয় অধিবেশন হয়। দ্বিতীয় পর্বে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান সোহাগ।
কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন। কমিটির বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ওপর আস্থা রেখেছেন পদপ্রত্যাশীরা।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও কর্ণফুলী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দ্বিতীয় অধিবেশন ৩৩১ জন কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে শুরু হয়। কাউন্সিলর হিসেবে দক্ষিণ জেলার অধীনে থানা, পৌরসভার কমিটির ২৫ জন ও জেলা কমিটির ৭৫ জন উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, সভাপতি পদের প্রার্থী থেকে দুটি নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন সভাপতি পদে ৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৭ জন প্রার্থী রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার উপজেলায় ৪ ক্লিনিক ও ৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা
পরবর্তী নিবন্ধনগরে চার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ