নগরে চার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৯ মে, ২০২২ at ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

অনুমোদন ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক না পাওয়াসহ নানা অনিয়মের দায়ে নগরের চারটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। গতকাল দুপুরে ঝটিকা অভিযানে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চট্টেশ্বরী সড়কের চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড, ডবলমুরিং থানাধীন ডিটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টার ক্লিনিক্যাল ল্যাব, দামপাড়ার নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরি ও পাঁচলাইশ থানাধীন চমেক হাসপাতালের সামনে সিএসটিসি হাসপাতাল।
লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র না পাওয়া, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন কারণে এ চার প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। যদিও গতকাল মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন সিভিল সার্জন। এর মাঝে পাঁচলাইশের ট্রিটমেন্ট হসপিটাল ও পলি হসপিটালের কাগজপত্র ঠিকঠাক পাওয়া গেছে। তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে অভ্যর্থনা কক্ষে (দৃশ্যমান জায়গায়) সেবার মূল্য প্রদর্শন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে।
এদিকে, দুুপুরে ৪ প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও বিকাল ৪টার পরও একাধিক প্রতিষ্ঠান চালু থাকতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সিভিল সার্জনের নির্দেশের পরও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। এছাড়া বন্ধ রাখার নির্দেশের পর ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে কিনা, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও এর তদারকি নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই। অমান্য করলে বিষয়টি আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাছাড়া জেলা প্রশাসনকে এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হবে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের সময় চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। কেবল রিসেপশনিস্ট ছিলেন। হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি বন্ধ রাখতে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়। আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে তা নিয়ে দুপুর ১টার মধ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে দাবি করে হাসপাতালটির পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাহেদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। আমরা জমা দিয়েছি। তবে কাগজপত্র জমা দিলেও একটি ছাড়া কোনো কাগজপত্র ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি বলে জানান সিভিল সার্জন।
সরেজমিনে গিয়ে বিকাল ৪টার পরও হাসপাতালটি খোলা পাওয়া যায়। তবে হাসপাতালটির পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাহেদুল ইসলাম দাবি করেছেন, দুপুরের পরই তারা ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। আর মাগরিবের পর হাসপাতালের গেটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচলাইশের সিএসটিসি হাসপাতালে গিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষার পরও দায়িত্বশীল কারো দেখা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্রও তারা দেখাতে পারেনি। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে আগত ও চিকিৎসারত রোগীদের অন্যত্র চিকিৎসাসেবা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। অবশ্য বিকেল ৫টার পরও হাসপাতালটি খোলা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন মহোদয়ের সাথে আমাদের এমডি সাহেবের কথা হয়েছে। তিনি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টারে ব্লাড কালেকশনের জন্য পাস করা (স্বীকৃত) কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। বাইরের প্যাথলজিতে দিয়ে তারা পরীক্ষা করান। এঙরে রুম ও প্যাথলজি রুম মানসম্মত নয়। এঙরে রুমের দেয়ালের ঘনত্ব ৫ ইঞ্চি। ছাদে লিড শিট লাগানো নেই। এছাড়া লাইসেন্স, ভ্যাট-ট্যাঙের কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি। এর প্রেক্ষিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
দামপাড়া এলাকার নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে অভিযানের বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, এই প্রতিষ্ঠানে রিসেপশনের সামনে রোগী বসিয়ে ব্লাড কালেকশন করতে দেখা গেছে। অনলাইনে আবেদন পাওয়া যায়নি, পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট, টিন সার্টিফিকেট কিছুই পাওয়া যায়নি। এছাড়া ল্যাবরেটরিটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পপুলার মেডিকেল সেন্টার ও নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিকে নতুন করে অনুমোদন দেয়া হবে না জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, অভিযান চলমান থাকবে। আর বন্ধ রাখার নির্দেশ অমান্যের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী নেতৃত্ব কেমন হবে সেটিই বড় কথা
পরবর্তী নিবন্ধসব অপরাধেই রোহিঙ্গারা