সব অপরাধেই রোহিঙ্গারা

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প

উখিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২৯ মে, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মাদক কারবার, স্বর্ণ চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, নারী পাচার, জাল টাকার কারবার, খুন, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মানব পাচার, ডাকাতি, ধর্ষণ, লাশ গুমসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা ঘটছে না। প্রায় সব ধরনের অপরাধের নিরাপদ চারণক্ষেত্র হয়ে উঠছে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের এমন ভয়ংকর আচরণ স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল থেকে রয়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাপক আকারে সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা আগমন ঘটে।
উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডেও অনেক সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জড়িয়ে পড়ছে। তারা এখন দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা বারবার সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সজাগ হতে বলেছি। এ মুহূর্তে প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা, অথবা এক স্থানে এতগুলো রোহিঙ্গা না রেখে তাদের বিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থানান্তর করা। এদের দমন করতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তাদের পাহারার ফাঁক গলে নানাভাবে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্তের মিয়ানমার অংশে অবস্থান নিয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা।
উখিয়ায় ২১টি ও টেকনাফে ১৩টিসহ ৩৪টি ক্যাম্পে রেকর্ড অনুযায়ী প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে ৮ ও ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান বা এপিবিএন পুলিশ। গত দেড় বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সার্বিক চিত্র উদ্বেগজনক।
৮ এপিবিএন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ মাস ধরে তারা উখিয়ার ১১টি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছে। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান ভবিষ্যতেও মাদক, অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধী আটক কার্যক্রম জোরদার করে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
১৪ এপিবিএন গত দুই বছরে উখিয়ার ১৫টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে। ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, ক্যাম্পে হত্যা, অস্ত্রবাজি ও মাদক কারবার জিরো লেভেলে নামিয়ে আনতে কয়েকটি বড় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে।
কঙবাজার র‌্যাব-১৫ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তর ও বিভিন্ন স্থান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ইয়াবা ও অনান্য মাদক উদ্ধার করেছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে র‌্যাব সূত্র জানায়। তাছাড়া বিভিন্ন থানা পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা পাচারকারীদের আটক করেছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) বলেন, ক্যাম্পের অবস্থা ভয়াবহ। আসলে এত ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পের অলিগলিতে সার্বক্ষণিক পুলিশি তৎপরতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
২৬ মে কঙবাজারে অনুষ্ঠিত বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমম্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত ১৭তম নির্বাহী কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতায় আমরা উদ্বিগ্ন। সেখানে অপরাধ এপিবিএন পুলিশের টহল তৎপরতা আরও বেশি জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে মোতায়েন করা হবে বিজিবি ও র‌্যাব। এরপরও অপরাধ দমনে সমস্যা হলে ক্যাম্পে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথা জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে চার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু