শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বুঝে নেওয়ার দিন আজ

আনুষ্ঠানিকতায় শ্রমীক দিবস, উপেক্ষীত অধিকার

| বুধবার , ১ মে, ২০২৪ at ২:৫৬ অপরাহ্ণ

বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক দিন আজ। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে সারা বিশ্বে একযোগে ‘মহান মে দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা করার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু শ্রমজীবীদের পেশাগত জীবনে নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকারগুলো অর্জিত হয়নি এখনো।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে এদিন সাধারণ ছুটি রয়েছে।

দিবসটির এবারের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।’

মে দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে নানা আয়োজন পালিত হচ্ছে। মহানগরীর বিভিন্নস্থানে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা।

এছাড়া বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়ন, চান্দগাঁও থানা ইমারত শ্রমীক ইউনিয়ন, পাহাড়তলী থানা ইমারত শ্রমীক ইউনিয়ন সহ বাঁশখালী উপজেলার আটো রিক্সসা পরিবহন শ্রমীক ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সংগঠন পথ সভা ও র‌্যালি করে।

এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর মধ্যে উদিচি চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, চট্টগ্রাম থিয়েটার, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, বিশ্বতান, সৃজন সংস্কৃতি অঙ্গন সহ বিভিন্ন সংগঠন মে দিবস উপলক্ষে গান, নাচ, আবৃত্তি নাটিকা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান নগরীর শাহ আমানত সিটি কর্পোরেশন মোড়ে আয়োজন করে।

প্রতি বছরের মত ঘটা করে পালিত এই দিনটি আসলে কতটা শ্রমিক আন্দোলন ভূমিকা রাখছে এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমীক অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনয়ন চট্টগ্রাম জেলা (টিইউসি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত বলেন, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনো ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যের কারণে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষদের পরিবার–পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই।

তিনি আরো বলেন একজন শ্রমিক হিসেবে নারী শ্রমিক শ্রম আইন অনুযায়ী সব অধিকারের সমান অংশীদার হলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। নারী শ্রমিক–অধ্যুষিত গার্মেন্টস, অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্প ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে স্বল্প মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিম্ন পদমর্যাদা, খণ্ডকালীন নিয়োগ, যখন–তখন ছাঁটাই এবং কর্মঘণ্টার অধিক কাজ করানো হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র থেকে সাপ্তাহিক ছুটি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয় না। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, সুপেয় পানির অভাব, যৌন হয়রানিসহ অনেক সমস্যা তাদের প্রতিনিয়ত ভোগ করতে হয়। সমকাজে সমমজুরি ও নারী–পুরুষের মজুরি বৈষম্য তো রয়েছেই। কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীরা সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত।

তিনি বলেন, ভাত–কাপড়, মাথা গোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষের বিশাল অংশ এখনো এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু স্বপ্নপূরণের পথ খুঁজে পায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাতির আক্রমণে এক যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে ফসলি জমিতে দানবের হাত!