কর্ণফুলীতে ফসলি জমিতে দানবের হাত!

নেপথ্যে প্রভাবশালী মহল

| বুধবার , ১ মে, ২০২৪ at ৫:২৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা এলাকায় ফসলি মাঠের উপর আঁচড়ে নেয় দুইটি দানবীয় হাত দূর থেকে দেখে হয়তো গা শিউরে উঠবে যে কারো কাছে যেতেই স্পষ্ট হবে ভেকু নামের দুটি যন্ত্রদানব দিয়ে তুলে নিচ্ছে মাটির উপরি ভাগের কৃষি জমি।

এভাবে প্রভাবশালী মহলের সিন্ডিকেটে খালি হচ্ছে কয়েক একর জমি।

অথচ বেশ কিছুদিন আগেও কৃষকেরা বর্গায় চাষ করতেন এসব ফসলি জমিতে। স্থানীয় সূত্রে জানায়, চট্টগ্রামের মারছা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাতকানিয়ার আবদুল আহাদ মর্তুজা নামক ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে কখনো রাতে কখনো দিনে ফসলি জমির মাটি কেটে উজাড় করছেন।

যদিও তাঁদের দাবি, পুরাতন পুকুর খনন করছেন। কিন্তু সরেজমিনের চিত্র বলছে ভিন্ন। দেখা মিলে, একটি হলুদ রঙের ও আরেকটি নীল রঙের যন্ত্রদানব দেদারছে নতুন জমির মাটি কাটছে। এতে কৃষি পরিবারগুলোতে বাড়ছে অনিশ্চয়তা আর হাহাকার। আর চলছে প্রকাশ্যে অনুমোদনহীন ভাবে ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চরলক্ষ্যা এলাকার দুই ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ হাসান কে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানায়, উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন ধরনের ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদন কোন কোম্পানি বা গ্রুপ নেয়নি। ঈদের আগেই ঘটনাটি শুনে উপজেলা ভূমি অফিস নিষেধ করেছিলেন মাটি কাটা বন্ধ করতে। এমনকি ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সরাসরি মাঠে গিয়ে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু এরমধ্যে রাতের আঁধারে ওই গ্রুপটি অনেক জমি কেটে ফেলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এখনো চলছে ফসলি জমির মাটিকাটা উৎসব। তিন ফসলী কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুর-ডোবায়। দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। কিন্তু লাগাম টেনে ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে প্রশাসনেরও। ভোর ৫ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি কাটছে দেখলে মনে হয় সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে পুকুর খনন করছে। এতে স্থানীয় গুটিকয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও নেতা জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

কর্ণফুলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বলেন, ‘আসলে বিষয়টা আমি জানতাম না। এখন শুনেছি। আপনাদের কাছে কোনো ছবি থাকলে একটু পাঠান। আমি উপজেলা প্রশাসনের সাথে বিষয়টি আলাপ করে ব্যবস্থা নিব।’

কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জহির হোসেন জানান, ‘ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। মাটি কাটার বিষয়ে প্রশাসন সহযোগিতা চাইছে আমরা সব সময় প্রস্তত।’

মানবাধিকার ও পরিবেশ আইনজীবি এ.এম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ আইনে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় এর উর্বরতা হারিয়ে যায়। তবে ভূমিদস্যুরা যেভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে, তাতে ওইসব এলাকার কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খবর নিচ্ছি। ফসলি জমি কাটা হচ্ছে কিনা৷ সেটা যাচাই-পূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রমজীবী মানুষের অধিকার বুঝে নেওয়ার দিন আজ
পরবর্তী নিবন্ধঅস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী চক্রের সদস্য গ্রেফতার