চার উপজেলায় ৪ ক্লিনিক ও ৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৯ মে, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা, ছাড়পত্র-লাইসেন্স না থাকায় চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে বাঁশখালীতে একটি ক্লিনিক ও ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা ও সিলগালা করে দেয়া হয়। টেকনাফে ৩টি প্রসব সেবা কেন্দ্র বন্ধ ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা করা হয়। লোহাগাড়ায় ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা এবং খাগড়াছড়িতে দুই ভুয়া চিকিৎসককে ৬ মাস কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগে নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে পরিচালিত অভিযানে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসদরের ডেন্টাল কেয়ার সিলগালা, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাঁশখালী মাতৃসদন জেনারেল হাসপাতাল, এ্যাপোলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সর্বমোট এক লাখ বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় একটি ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয় এবং অন্য ক্লিনিকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মাহমুদুল হাসান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার, মেডিকেল অফিসার ডা. হীরক কুমার পাল, এসআই প্রদীপ চক্রবর্তী, উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বাঁশখালীতে নানাভাবে গড়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতাল, ল্যাব ও ক্লিনিকগুলোর কোনো লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। বছরখানেক আগে অভিযানের সময় জরিমানা আদায় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা তা করেননি বলে তিনি জানান।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ায় অনুমোদন না থাকায় ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ। প্রতিষ্ঠান দুটি হল ঠাকুরদিঘী বাজারে আবদুল আজিজের মালিকানাধীন মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও তেওয়ারীহাট বাজারে মো. ফারুকের মালিকানাধীন নিউ ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া লোহাগাড়ায় আরো ৬টি অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ সূত্র জানায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স না থাকা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা অভিযোগে প্রতিষ্ঠান ২টি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনুমোদনহীন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযানে সাথে ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুমন চৌধুরী ও উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শের আলী।
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় ৩টি অবৈধ ডেলিভারি সেন্টার (প্রসব সেবা কেন্দ্র) বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। একটিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও অপর দুটিকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার সময় উপজেলার হ্নীলা বাজার প্রাঙ্গণে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেলিভারি কেন্দ্রে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল জানান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়ছার খসরুর নেতৃত্বে হ্নীলা এলাকায় ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও তিনটি অবৈধ ডেলিভারি সেবা কেন্দ্রে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালীন নুর জাহানের মালিকানাধীন রুমাইডা মেডিকো, বাবুটি দাশ ও স্মৃতিকতা দাসের মালিকানাধীন হ্নীলা চেম্বারসহ তিনটি অবৈধ প্রসব-সেবা কেন্দ্র সিলগালা করে দেওয়া হয়। এছাড়া কাগজপত্র ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় হ্নীলা ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে সাময়িকভাবে সিলগালা করা হয়। অন্যদিকে হ্নীলা ডায়াগনস্টিক ও লাইফ কেয়ার নামের ২টি ল্যাবের কাগজপত্র আপডেট ও কার্যক্রম সন্তোষজনক হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়। অভিযানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুবীর কুমার দত্ত, ইউএনওর প্রধান সহকারী কাজল কান্তি দাশ, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল, মেডিকেল অফিসার ডা. প্রণয় রুদ্র প্রমুখ অংশ নেন।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে দুই ভুয়া চিকিৎসককে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ি সদরের মেহেদীবাগ ও নারিকেল বাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান শাকিল জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া ইমদাদুল হক লাবু ও এস কে ধর নামে দুইজন ভুয়া দন্ত চিকিৎসককে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধনবিহীন চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ কাউন্সিল অধিবেশন
পরবর্তী নিবন্ধআগামী নেতৃত্ব কেমন হবে সেটিই বড় কথা