৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাংলাদেশে নতুন নয় জানিয়ে এই তাপমাত্রাতে কেন স্কুল বন্ধ থাকবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ নিয়ে অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়ার জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা–সমালোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না। ঈদের ছুটি শেষে গরমের কারণে এক সপ্তাহের বাড়তি ছুটি কাটিয়ে গতকাল রোববার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আদেশ আসার পর অভিভাবকদের একাংশ নাখোশ। এমন গরমে শিশুদের আসা যাওয়া ও ক্লাস করতে কষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। খবর বিডিনিউজের।
স্কুল খোলার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কিছুটা কমই দেখা গেছে। এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি স্কুল বন্ধের দাবির প্রসঙ্গে কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করেন। খবর বিডিনিউজের।
নওফেল বলেন, কিছু হলেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার এত আলোচনা কেন আসে? বাংলাদেশে কি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই? এখন সবকিছু খোলা থাকবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এই প্রত্যাশাটি যথাযথ নয়। বিভাগীয় শহরে কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুলও অভিভাবকদের চাপে বন্ধ করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের এই ধরনের মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
এপ্রিল এমনিতেই দেশের উষ্ণতম মাস। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতে গরমের তীব্রতায় হাঁসফাঁস করতে হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। চলতি বছর গরমের তীব্রতা আরো বেশি।
শনিবার দেশের ৪২ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পারদ উঠেছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এই মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়ার উপর দিয়েও এই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি অংশে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০–এর পর্যায়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সুতরাং পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০–এর উপরে যাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে সেখানকার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা পাঠদানের সময়ের পরিবর্তন করতে পারবেন বলেও জানিয়ে দেন নওফেল।
শনিবার স্কুল বন্ধ নিয়ে মূল্যায়ন চলছে : ২০২২ সালের আগস্ট থেকে সরকার শুক্রবারের পাশাপাশি শনিবারও স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঈদের ছুটি শেষে গরমের কারণে স্কুল বাড়তি বন্ধ রাখার কারণে মাধ্যমিকে এখন শনিবারও স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি স্থায়ী হয়ে যাবে কিনা, সেই বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামের যে প্রক্রিয়া সেখানে পুরো বছর শনিবার বন্ধ দেওয়া উচিত কিনা, সেটি নিয়ে আমাদের আলোচনা আছে। যেহেতু আমরা ১০ দিন পাঠদান মিস করেছি, তাই এই মুহূর্তে শনিবার স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে সেটি যদি প্রয়োজন না হয়, তাহলে অন্য সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে অভিভাবকদের একাংশের সমালোচনা পাত্তা দিচ্ছেন না শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, স্কুল খোলার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিভাবকরা আলোচনা–সমালোচনা করছেন। আলোচনা–সমালোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না।
শিক্ষার্থীদের শিখন ফল অর্জন করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্ল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামের কাজ চলছে। তাই জনপ্রিয়তার নিরিখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, বাস্তবতার নিরিখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রাই বাংলাদেশের তাপমাত্রা নয়। শুধু ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বিবেচনা করে সারা দেশের বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।