শেষ পর্যন্ত ভারতই জিতল

আইসিসি টি-টোয়েন্টি

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ২ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:২৯ অপরাহ্ণ

বৃষ্টি থামলেও শেষ পর্যন্ত জিতল ভারত। মিড উইকেট থেকে অসাধারণ এক থ্রোয়ে লোকেশ রাহুল সরাসরি বল লাগালেন স্টাম্পে। দ্বিতীয় রানে একটু হোঁচট খেয়ে আবার ছুটলেন লিটন কুমার দাস কিন্তু ফুল লেংথ ডাইভ দিয়েও পারলেন না বাঁচতে। রাহুলের ওই এক ঝলকেই যেন লেখা হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য।

ওই আউটের পরও খেলা হয় ৮.৪ ওভার। এমনকি শেষ বল পর্যন্ত জিইয়ে থাকে উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত ভারতের জয় স্রেফ ৫ রানে। তারপরও, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত সেটিই।

চোখধাঁধানো সব শটে নান্দনিকতার ছবি এঁকে লিটন যখন রান আউট হয়ে আস্তে আস্তে মাঠ ছেড়ে গেলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনাও যেন বেরিয়ে গেল অনেকটাই। ওই আউটের পর গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকদের যে গগণবিদারী চিৎকার আর মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাঁড়ধনহারা উল্লাস, সেটিই শেষ পর্যন্ত ভারতকে বয়ে নিল জয়োল্লাসের ঠিকানায়।

এই জয়ে সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলো ভারতের। হেরে গিয়ে একরকম শেষই হয়ে গেল বাংলাদেশের আশা।

বাংলাদেশের ইনিংসকে আলাদা করা যায় দুই ভাগে- লিটনের বিদায়ের আগে ও পরে। কিংবা আরেকটু পিছিয়ে বলা যায়, বৃষ্টির আগে ও পরে।
বৃষ্টি আর লিটনের রান আউটের পর এলোমেলো বাংলাদেশ

লিটনের ২১ বলে ফিফটির সৌজন্যে বাংলাদেশ পায় প্রায় আড়াই বছরের মধ্যে সেরা শুরু। এরপরই বৃষ্টিতে বন্ধ খেলা। বৃষ্টির পর নতুন সমীকরণে লক্ষ্য বাকি ৯ ওভারে ৮৫ রান। ১০ উইকেট নিয়ে যে সমীকরণে ফেভারিট হওয়ার কথা বাংলাদেশেরই।

কিন্তু বৃষ্টি-বিরতিতে নষ্ট হলো ছন্দ। লিটনের আউটের পর মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ল তাসের ঘরের মতো। শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদের সৌজন্যে কিছুটা উত্তেজনা জাগল বটে। তবে সেটি তখন আর সেই অর্থে আশা নয়, বরং দূরাশা।

রান তাড়া শুরুর সময় লক্ষ্য ছিল ১৮৫। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের বাস্তবতা ও সাম্প্রতিক ফর্ম, সব মিলিয়েই এই লক্ষ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে ধরে নেওয়া স্বাভাবিক। তবে লিটন ওপেনিংয়ে ফিরে দলে ব্যাটিংয়ের চিত্রও বদলে দেন। ভারতের শক্তিশালী পেস আক্রমণকে চমকে দেন তিনি একের পর এক শটে।

ষষ্ঠ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। ৩৩ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ফিফটি।

পাওয়ার প্লে শেষে নাজমুল হোসেন শান্তর রান ১২ বলে ৪। তারপরও দলের রান ৬০। কারণ, লিটনের উত্তাল ব্যাটে ততক্ষণে রান এসে গেছে ২৪ বলে ৫৬!

রান-বলের এই হিসাব দেখে যেমন বিধ্বংসী বা বিস্ফোরক মনে হয়, তেমন কিছুই ছিল না লিটনের ব্যাটিংয়ে। দারুণ সব ক্রিকেট শট খেলেই তিনি গুঁড়িয়ে দেন ভারতের বোলিং।

৭ ওভারে ৬৬ রান ওঠার পর বৃষ্টি। ডিএলএস পার স্কোরে তখন ১৭ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ।

ভারতকে স্বস্তি দিয়ে বৃষ্টি থামে একসময়। শুরুর পর দ্বিতীয় বলেই আরও বড় স্বস্তি তাদের। লোকেশ রাহুলের ক্ষীপ্রতা আর নিখুঁত নিশানায় লিটন রান আউট।

১৯ বলে ৭ রান থেকে শান্ত জেগে ওঠার ইঙ্গিত দেন একটি চার ও ছক্কা মেরে। কিন্তু পারলেন না শুরুর ওই মন্থরতা পুষিয়ে দিতে। এরপর উইকেট পতনের মিছিল যেন।

আর্শদিপ সিংয়ের এক ওভারেই বিদায় আফিফ হোসেন ও সাকিব আল হাসানের। হার্দিক পান্ডিয়ার এক ওভারে শেষ ইয়াসির আলি ও মোসাদ্দেক হোসেন। ২৪ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ নাগালের বাইরে।

সব হারানোর পর আশা আরেকটু উঁকি দেয় সোহান-তাসকিনের শেষের ঝড়ে। পান্ডিয়াকে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন, শেষ ওভারে আর্শদিপকে চার-ছক্কা মারেন সোহান। শেষ বলে ছক্কা মারতে পারলেও ম্যাচ গড়াত সুপার ওভারে। কিন্তু স্নায়ুর চাপ ধরে রাখেন আর্শদিপ।

ব্যাটিংয়ে শেষের লড়াইয়ের আগে বোলিংয়ের শুরুটাও দুর্দান্ত করেন তাসকিন। একদম প্রথম ওভার থেকে চেপে ধরেন ভারতীয় ওপেনারদের। উইকেট তিনিই পেতে পারতেন আগে। কিন্তু তার বলে রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ ছাড়েন হাসান মাহমুদ।

একটু পরই হাসান আক্রমণে এসে প্রায়শ্চিত্ত করেন রোহিতকে ফিরিয়ে। তাসকিন টানা ৪ ওভারের স্পেলে রান দেন মোটে ১৫।

কিন্তু শরিফুল ইসলামের আলগা বোলিংয়ে সরে যায় শুরুর চাপ। ৮ ওভারে ভারতের রান ছিল স্রেফ ৫২। পরের ওভারে শরিফুলকে তুলাধুনা করে লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি নেন ২৪ রান।

মোমেন্টাম বদলে যায়। আর ফেরানো যায়নি। আগের তিন ম্যাচে রান না পাওয়া রাহুল ফর্মে ফিরে ফিফটি করেন ৩১ বলে। কোহলির ব্যাট থেকে আসে আরও একটি ফিফটি।

এরপর উইকেট কিছু হারায় ভারত। তবে রানও উঠতে থাকে। সাকিবের বলে ১১ রানে সূর্যকুমার যাদবের ক্যাচ ছাড়েন মুস্তাফিজুর রহমান। টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার দিনে সূর্যকুমার ১৬ বলে করেন ৩০।

পান্ডিয়া, দিনেশ কার্তিকরা শেষ দিকে ঝড় তুলতে না পারলেও কোহলির সৌজন্যে বাড়ে রান। শেষ ওভারে শরিফুলের বলে চার-ছক্কা মানের রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

কোহলি অপরাজিত থাকেন ৪৪ বলে ৬৪ রানে। আসরের চার ম্যাচে তার তৃতীয় ফিফটি, সবকটিই অপরাজিত। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ২২০ রান তার, গড়ও ২২০!

ম্যান অব দা ম্যাচও তিনিই। তবে তার আগে লিটনের সেই নান্দনিক ঝড় ও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের গুবলেট পাকানো।

খেলা শেষে স্টেডিয়ামের সাউন্ডবক্সে বেজে ওঠা ‘বান্দে মাতরম’ গানের সঙ্গে যখন গলা ফাটাচ্ছেন ভারতীয় সমর্থকেরা, বাংলাদেশি সমর্থেকরা তখন মাঠ ছাড়ছেন হতাশায়। কাছে গিয়েও হলো না, আরও একবার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৮৪/৬ (রাহুল ৫০, রোহিত ২, কোহলি ৬৪*, সূর্যকুমার ৩০, পান্ডিয়া ৫, কার্তিক ৭, আকসার ৭, অশ্বিন ১৩*; তাসকিন ৪-০-১৫-০, শরিফুল ৪-০-৫৭-০, হাসান ৪-০-৪৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, সাকিব ৪-০-৩৩-২)

বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৫১) ১৬ ওভারে ১৪৫/৬ (শান্ত ২১, লিটন ৬০, সাকিব ১৩, আফিফ ৩, ইয়াসির ১, সোহান ২৫*, মোসাদ্দেক ৬, তাসকিন ১২*; ভুবনেশ্বর ৩-০-২৭-০, আর্শদিপ ৪-০-৩৮-২, শামি ৩-০-২৫-১, আকসার ১-০-৬-০, অশ্বিন ২-০-১৯-০, পান্ডিয়া ৩-০-২৮-২)

ফল: ভারত ৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে আগুনে পুড়ল দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে পাথর নিক্ষেপে এবার মাথা ফাটলো চবি শিক্ষার্থীর