মীরসরাইয়ের মহামায়া ইকোপার্ক ও খইয়াছড়া ঝর্না দর্শন

মোয়াজ্জেম হোসেন | বুধবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

টলমলে স্বচ্ছ পানি, সবুজ পাহাড় পাখির কিচির মিছির এক অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি মিরসরাই মহামায়া ইকোপার্ক। যেখানে গিরিনদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এ যেন কোনও শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি। মিরসরাইয়ের এই সৌন্দর্যকে দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও সহজে পরিচয় করিয়ে দিতে এখানে নির্মিত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ‘মহামায়া লেক’।

মহামায়া লেক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ। এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার। মিরসরাইয়ের দুর্গাপুরে পাহাড়ের পাদদেশে কৃত্রিম জলাভূমি নিয়ে গঠিত মহামায়া লেক। বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ি ঝিরি ও ঝর্নার পানি দিয়ে এই এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে অসাধারণ পাহাড়ি গুহা, সুড়ঙ্গ, রাবার ড্যাম এবং ঝর্ণা। যে কেউ চাইলে বোটে করে লেক পার হয়ে দূর পাহাড়ে অবস্থিত ঝর্ণার শীতল পানির ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারেন। মহামায়া লেকের ঝর্ণার পানিতে গোসল করার অনুভূতি অসাধারণ।

২৪ এর ২৮ ডিসেম্বর আমার পরিবারের পাঁচ সদস্য দিনা, নাভান, আয়ান সাজিদ ও আনাবিয়াকে নিয়ে বছর শেষে এই ট্যুর। পাইলটের আসনে আছে ভাতিজা। পৌষের শিশির শিক্ত হিম শীতল সকালে রওনা দিই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে লেক আরা ঝর্নার দেশ মিরসরাইয়ে। গাছের ছায়ায় হালকা রোদের উষ্ণতায় পাঁচ ছয় মিনিট হাঁটতেই মহামায়া লেকের অবারিত সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। লেকের পাড়ে ক্যাম্পিং পয়েন্ট দেখে লেকের জলরাশি ও ঝর্নার সৌন্দর্য দেখতে বোট পয়েন্টের দিকে এগিয়ে যাই। কাক চক্ষু জল/ অতীব শীতল জল/ নাও নিয়ে বসে আছি/ কে যাবি চলনা, আমাদের একা যেতে হয়নি। দুপাশে পাহাড় পর্বত মাঝে স্বচ্ছ নীল জলের লেকের বুক চিড়ে ঝরনার পানে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ট্রলার। জলের বুকে পানকৌড়ির ডুব সাতার ও কিছু অতিথি পাখি সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। ট্রলার থেকে নেমে পাহাড়ের ঢালে একটু হেঁটে গেলেই অপরূপ ঝর্নার দেখা মেলে। ঝর্নার জলে ঝোপ ঝাড়ের আড়ালের ফাঁকে পৌষালি সূর্যালোক অবর্ণনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এবারে গন্তব্য খইয়াছড়া ঝর্ণা। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের আগে মহাসড়কের পূর্বে সরু পিচঢালা রাস্তা। একটু সামনে এগুতেই রেললাইন। রেললাইন পার হয়ে কিছুদূর যেতেই গাড়ির রাস্তা শেষ। গাড়ি পার্কিং করে পায়ে হেঁটে ট্রেইল ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। গ্রাম, উঁচুনিচু পাহাড়, কয়েকটি বাঁশের সাঁকো, নানারকম সব্জি ক্ষেত ও ছরা পেরিয়ে যেতে হয়। সাকোঁ পেরিয়ে এগুতেই উদয় হলো একটা ঝিরিপথের। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরণই বলে দিচ্ছে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেদেরকে আমরা আবিষ্কার করলাম লাল আর নীল রঙের ফড়িং এর মিছিলে! যতদূর পর্যন্ত ঝিড়িপথ গেছে ততদুর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পাচ্ছি পানি পড়ার শব্দ, প্রকৃতি এখানে খুব শান্ত, কোথাও কোনো আওয়াজ নেই, চারপাশে মন ভালো করে দেয়া সবুজ দোল খাচ্ছে ফড়িং এর পাখায়। দূরে শোনা যাচ্ছে একটানা ঝিমঝিম শব্দ ! ঐ শব্দের উৎসের দিকেই আমাদের যাত্রা। কিছুদূর হেঁটে একটা মোড় ঘুরতেই চোখের সামনে নিজের বিশালতা নিয়ে ঝুপ করে হাজির হলো খৈয়াছড়া ঝর্ণা, অনেক উপর থেকে একটানা পানি পড়ছে। সৌন্দর্যের শুরু নাকি এখান থেকেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন বছরে জাদুকরী তিন ‘স’
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে