সুলেখার নীল আকাশ

চম্পা চক্রবর্তী | শনিবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বিয়ের পর থেকে বেশ গোছানো ছিল সুলেখা। স্বামী সন্তান আর সংসারএই ছিলো সকাল থেকে সন্ধ্যা তার ধ্যানজ্ঞান। ছোট্ট একটা বাসা নিয়ে থাকে। স্বামী প্রবাসী। এই দুই বছরে করোনা মহামারীতে সর্বক্ষণ চিন্তা। দুই জন দুই দেশে যদিও, কথা হয় প্রতিদিন, তবুও মন মানে না। একটা দুঃস্বপ্ন তাড়া করে। করোনার মাঝামাঝিতে একবার অনেক কষ্টে দেশে আসলো সুলেখার স্বামী। কতো কথা কতো গল্প, কতো স্মৃতি। এবার এসে বেশি মায়া জমিয়ে গেলো, এ কয়দিন সুলেখা খেতে গেলে বিকেলে একা বসে চায়ের কাপে চুমুক দিলে খুব মনে পড়ে তার কথা। সবকিছু। প্রতিদিন বের হলে এটা ওটা কিনে নিয়ে আসতো। বাচ্চাদের সামনে এনে হাতে দিতো আর বলতো এই নাও এটা তোমার জন্য। পরক্ষণে কোমলমতি শিশুদের মুখ পানে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নত করে থাকতো আর বলতো বিকেলে তোমাদের জন্য নিয়ে আসবো।

সেদিন হঠাৎ বাইরে থেকে এসে জোরে জোরে নাম ধরে ডাকছেসুলেখা! সুলেখা! কই তুমি? সে ততক্ষণে দুপুরের খাবার নিয়ে ব্যস্ত। রান্না ঘর থেকে বললো আসছি, হাতের কাজটি অর্ধেকে রেখে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে দেখে একটা প্যাকেট হঠাৎ পিছনে লুকিয়ে তার পতিদেব দাঁড়িয়ে। বলল চোখ বন্ধ করো। সুলেখা তখন বিরক্ত মুখে কী যে করো না। আমার কতো কাজ এখন সবাই খেতে চাইবে। তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে। এই নাও চোখ বন্ধ করলাম। প্যাকেট থেকে শাড়িটা বের করে গায়ে জড়িয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল এবার চোখ খুলো। চোখ খুলে দেখেই সুলেখা চক্ষুস্থির লাল আর হলুদের ভীষণ সুন্দর একটা শাড়িআঁচল ভারি কারুকাজ।

সুলেখা বললো কী দরকার ছিলো! বলো তো মাসের শেষ এখন শাড়ি কেনার কতো খরচ বাকি রয়েছে। রাহুল বলল সামনে বসন্ত। এই বসন্তে তো আমি থাকবো না আবার বিদেশে ফিরে যাবো তাই এখন কিনে দিলাম আজ বিকেলে তুমি এটা পরবে। খোঁপায় হলুদ গাঁদা দেবে কপালে টকটকে লাল রঙের টিপ দেবে তারপর আমরা দু’জনে ছাঁদে যাবো হাঁটতে। এখন তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সেরে নাও। আমি স্নানে গেলাম বলে তাড়াহুড়ো করে রাহুল বাথরুমে চলে গেলো। বিকেলে দু’জন ছাদে অনেক ছবি তুলল। সুলেখা এতক্ষণ সেই ছবিগুলো দেখছিলো আর ভাবছিলো রাহুলের গুনগুন করে বলা কবিতা আর গানের কথা।

কয়দিনে ধরে রাহুল বলছিলো গায়ে হালকা জ্বর আর গলা খুসখুসে কাশি। বুকের একপাশে খুব ব্যথা করে। খুব চিন্তা হচ্ছে একা একা কী করছে কেমন করছে। আমি দূর থেকে ফোনে কী বা করতে পারি। ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিয়ে ভিডিও কল দিল দেখে রাহুল বিছানায় শুয়ে মুখটা শুকিয়ে গেছে। সুলেখা বারবার বলছে উঠোউঠে কিছু খাও। মাথায় একটু জল দাও। ওষুধ খাও। কোন কিছু সে শুনছে না। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। চোখের জল নিয়ে সুলেখাও একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। খুব ভোরে ফোন বেজে উঠলো ওপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে কি কি বলছে ঘুম চোখে ভালো করে বুঝে উঠতে পারছেন না। ততক্ষণে সব শেষ। সুলেখার আকাশে ঘোর অমবস্যা। শুরু হয়ে গেল সুলেখার জীবনের নতুন ইতিহাস

লেখক : শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্দেশনা শুধু সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধের চেতনাসঞ্চারী বেগম মুশতারী শফী