‘ইত্যাদি’ সমাজ সচেতনতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

চম্পা চক্রবর্তী | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

একসময়ের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যমে বিটিভিকে আমরা এখন বলতে গেলে ভুলতে বসেছি। কেউ এখন আর বিটিভি দেখে না। হাজার চ্যানেলের ভিড়ে কিছুটা বিটিভিকে বাঁচিয়ে রেখেছে জননন্দিত উপস্থাপক, একসময়কার কমেডিয়ান চরিত্রের অভিনেতা শ্রদ্ধেয়, হানিফ সংকেত। তাঁর বহুল আলোচিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় নতুন নতুন করে বিভিন্ন জেলার গুণী মানুষকে তুলে ধরা। এবং ঐ জেলার ঐতিহ্যবাহী পোশাক নাচ, গান, কৌতুক, এবং সমসাময়িক ঘটনার উপদেশমূলক জনকল্যাণে নির্মিত সব ছোট ছোট নাটিকার মাধ্যমে দর্শকের মাঝে তুলে ধরেন। এখনও সব বয়সের মানুষ সেই ইত্যাদি অনুষ্ঠান দেখার জন্য বিটিভিকে খুঁজে। বছরে কয়েকটি মাত্র অনুষ্ঠান করে। এর মধ্যে ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আজহাতে দুটি পর্ব থাকে। আমরাও অপেক্ষা করি কখন সেই কাঙ্ক্ষিত বিনোদন টিভি পর্দায় দেখতে পাবো। কথার জাদুতে সারাক্ষণ মানুষকে মাতিয়ে রাখেন। ছন্দে ছন্দে বলা কথা পর পর কী সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলে। আবার অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেয় জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ফলের আর ঔষধী গাছ।

এবারের ঈদে প্রচারিত ‘ ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানটা নিয়েই মূলত বলতে আসা। এবারের কয়েকটা পর্ব ভীষণ ভালো লেগেছে তার মধ্যে একাল আর সেকালের বিয়ে নিয়ে নৃত্য শিল্পী নিপা আর শিবলী সাদিক পরিবেশিত নাট্যাংশ কতো সুন্দর করে তুলে ধরেছেন আগেকার দিনে বিয়ের দিনটি। দেখতে দেখতে হারিয়ে গিয়েছিলাম ছোট বেলার মাসী পিসীর বিয়ের দিনে। পরবর্তীতে যখন এখনকার দিনের বিয়ে দেখালো তখন দেখে ভাবছি আমরা কতটা আধুনিকতার নামে কোথায় ডুবে গেছি। হিন্দি গানের ভীরে লোককথা, লোকসংগীত হারিয়ে গেছে। হাজার হাজার টাকা দিয়ে পার্লারে সাজতে গিয়ে গায়ে হলুদটাই দেওয়া হয় না। পরিচালক খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর আরেকটা পর্বে দেখানো হলো তিন বন্ধুর কষ্টের কথা গানে গানে শোনালো। তিন বন্ধুই জীবনের অর্জিত সব টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে কষ্টের কথা একজন আরেকজনকে বলছে।

প্রথম বন্ধুর ছেলে অবৈধ টাকা ইনকাম করতে গিয়ে জেলে হাজত বাস করছে। দ্বিতীয় বন্ধুর ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে নেশা করে সমাজে অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছে। যাকে তাকে ছুরি মেরে টাকা নিয়ে পালাচ্ছে। তৃতীয় বন্ধুর মেয়ের ধুমধাম করে বিয়ে দিল। মা বাবা মনে করেছিল বিয়ের পর মেয়ের পরিবর্তন হবে ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু নিয়ে আড্ডাবাজি কমবে। চিন্তা বিপরীত হলো সংসারে মন নেই সারাদিন টই টই করে বেড়াচ্ছে শ্বশুর বাড়ি থেকে সারাক্ষণ অভিযোগ আসছে। এখনকার মা বাবার যন্ত্রণা। বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানের চিন্তায় ঘুম নেই চোখে। এই সমাজে আমাদের ঘরে ঘরে এখন এমন অনেক মা বাবা আছে উনাদের মনের কষ্ট কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে তিন বন্ধুর মাধ্যমে। শিক্ষামূলক ইত্যাদি অনুষ্ঠান দেখে আমাদের কিছুটা হলে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়। কিন্তু যদের দেখা দরকার, যাদের প্রকৃত শিক্ষা নেওয়া দরকার তারা তো এসব অনুষ্ঠান দেখা না ওরা টিকটক নিয়ে ব্যস্ত। আধুনিক যুগে এসে বিভিন্ন হিন্দি চ্যানেলের মাঝে এখনও বিটিভির সেই ইত্যাদি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে বিটিভির পর্দায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুষ্টিয়ায় সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় চাই
পরবর্তী নিবন্ধআল্লাহর ঘরে থাকা : চোখে দেখা কিছু সংকট