জব্বারের বলী খেলা

প্রতিমা দাশ | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

জব্বারের বলী খেলা চট্টগ্রামের লোকায়ত বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং চট্টগ্রাম বাসীর এক অনন্য আবেগ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে নববর্ষের অনাবিল আনন্দের সাথে যোগ হয় জব্বারের বলী খেলা। এই বলী খেলা শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ তা দাবি করে না, পরাধীনতার শৃংখল মোচনের জন্য জব্বারের বলী খেলাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বৃহত্তম আয়োজন হিসেবেও বিবেচনায় নিতে হয়। ১৯০৯ সালে প্রথম এই প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর। তার মৃত্যুর পরবর্তীতে এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়।

চট্টগ্রামের মানুষ এই খেলাটাকে এত ভালোবেসে ফেলেছে যে, আব্দুল জব্বারের বলী খেলা এই বছর ১১৫ বছর অতিক্রম করবে, আমাদের মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এবং করোনা অতিমারির দুই বছর বাদ দিয়ে আর কখনো জব্বারের বলী খেলা বন্ধ থাকেনি। প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি ময়দানে আব্দুল জব্বারের বলী খেলার আসর বসে। এই বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির মাঠের আশেপাশে তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। এটাই চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা। এই মেলা কে ঘিরে চট্টগ্রামে বৃদ্ধ, শিশু কিশোর, তরুণ, ঘরের বধু, গৃহিণীরা সকলের মাঝে এক ধরনের আনন্দ উত্তেজনা বিরাজ করে।

কারণ এই মেলাতে গৃহিণীদের ঘরের গৃহস্থালির সব ধরনের ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী সহজে কেনা যায়। ছোট ছোট শিশুদের জন্য বর্তমান সময়ে হারিয়ে যাওয়া অনেক খেলার সামগ্রী এই বলী খেলার মেলায় পাওয়া যায়। তরুণীদের কাচের চুড়ি, মাটির গহনা নানান রকম প্রসাধনী পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মৃৎশিল্পীদের বিরাট একটা অংশ এখানে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মিলিত হয়। কোন অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশাখী ঝড় না হলে তাদের ব্যবসা খুব ভালোই চলে। মানুষ বিভিন্ন ধরনের মাটির সামগ্রী, ফুলের টব, ঘর সাজানোর টেরাকোটা অনেক কিছু সেখান থেকে ক্রয় করে। বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই মেলাটির ভূমিকা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই বলী খেলা মূলত কুস্তি খেলা।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি খেলাকে বলী খেলা বলা হয়, এই খেলার প্রধান আকর্ষণ হাজার হাজার দর্শকদের অনুপ্রেরণা এবং ভালোবাসা। দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আসে এই বলী খেলা উপভোগ করার জন্য। বিশেষ করে তরুণরা কুস্তিগীরদের শারীরিক গঠন সুঠাম দেহ অনেক কিছুই অনুসরণ করে। একসময় চট্টগ্রাম কে বলা হতো বলীর দেশ। কালের আবর্তনে চট্টগ্রামের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, কিন্তু এই জব্বারের বলী খেলা বর্তমানে দেশের বৃহত্তম লোকজ উৎসব হিসেবে বিবেচিত।

এখন তো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মিডিয়ার কল্যাণে সারা পৃথিবীর কাছে চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলা এক ঐতিহ্য সংস্কৃতির অনন্য উদাহরণ। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এই জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলার সব ধরনের প্রশাসনিক সুবিধা যেন নিশ্চিত হয়, আমরা যেন আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি এভাবে আগলে রাখতে পারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি নামহীন স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে