রপ্তানি না করেই প্রণোদনার ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

১৩ সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড জালিয়াতি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১২ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি না করেই প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। ৯১টি মিথ্যা শিপিং বিলের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক ব্যবসায়ীকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী ইতোপূর্বে দুই দফা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলেও শেষ পর্যন্ত তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার বিভিন্ন খাতে নগদ প্রণোদনা প্রদান করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা দেয়া হয় কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যে। এই খাতে সরকারের নগদ প্রণোদনা ২০ শতাংশ। অর্থাৎ কেউ ১ লাখ টাকার কৃষি কিংবা প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্য পণ্য যেমন মুড়ি, বিস্কিট, মসলা, পটেটো চিপস্‌ প্রভৃতি পণ্য রপ্তানি করলে রপ্তানি মূল্যের পাশাপাশি সরকার থেকেও ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা পাবে। আর সরকারের এই মহৎ উদ্যোগটিকে কাজে লাগিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রণোদনার সেই অর্থ আত্মসাৎ শুরু করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাম্প্রতিক এক হিসেবে ৮০০ চালানে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা গায়েবের সাথে জড়িত বলেও কাস্টমসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে মামুন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন মিয়াজীকে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ইলিয়াছ মামুন মিয়াজীর বিরুদ্ধে ১৩টি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে পণ্য রপ্তানির মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করা হয়। সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেই বন্দর থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী উচ্চ আদালত থেকে দুই দফা জামিন নেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী গতকাল মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানান। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মামুন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী কুমিল্লা সদরের পূর্ব জোড়াকাননের লালবাগের মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়াজীর পুত্র। ঢাকার মতিঝিলের ২৯২ নং ফকিরাপুলের শতাব্দী সেন্টারের নিচতলার মামুন এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি পণ্য রপ্তানি করেছেন দেখিয়ে ১০ কোটির বেশি টাকার প্রণোদনা গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবে ওই ঠিকানায় এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই কখনো ছিল না বলে কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন মিয়াজীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো চক্রটি বেরিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করে কাস্টমসের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ একটু মনযোগী হলেই এই চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা সম্ভব। একজন লোক কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি না করেই সরকারের একটি মহৎ প্রকল্পের ১০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেবে এটি মানা যায় না। কারা কারা এই ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত তা জাতির স্বার্থেই বের করা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে এমন কাজ দিনের পর দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এর সাথে অবশ্যই কাস্টমসের কেউ না কেউ জড়িত। এই ধরনের ফাইলগুলোর সাথে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা না হলে ভবিষ্যতে নতুন নতুন চক্র গড়ে উঠবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাড়া বাড়ল লাইটার জাহাজে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে শিল্পাঞ্চলে কোন এলাকায় কোন দিন ছুটি