ঘনবসতি থেকে বিমানটি জনশূন্য এলাকায় নিয়ে প্যারাসুটে নামেন দুই পাইলট

জাওয়াদের স্বপ্ন থেকে গেলো অধরা

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১০ মে, ২০২৪ at ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

চৌকস অফিসার হিসেবে আগামী মাস খানেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগ দেয়ার কথা ছিল ‘সোর্ড অফ অনার’ বিজয়ী মেধাবী অফিসার আসিম জাওয়াদের। কিন্তু প্রশিক্ষণ বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তার সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেলো। ছোট বেলা থেকে বিমানবাহিনীর অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন জাওয়াদ। শিক্ষিকা মা নিলুফার আকতার খানম এবং বাবা ডা. মোহাম্মদ আমান উল্ল্যাহ ওইভাবেই সন্তানকে মানুষ করেছিলেন। লেখাপড়া করিয়েছিলেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে। জীবনে কোথাও দ্বিতীয় না হওয়া আসিম জাওয়াদ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। চৌকস অফিসার হিসেবে সোর্ড অব অনার পেয়ে লাভ করেন কমিশন। ২০১১ সালে একজন পাইলট অফিসার হিসেবে দারুণ সব দক্ষতায় শুরু করেন কর্মজীবন। চাকুরি জীবনে সাফল্য দেখার পর বিয়ে করেন নারায়ণগঞ্জের অন্তরা আকতারকে। ছয় বছর আগে ঘর আলো করে আসে কন্যা সন্তান আয়াজ। স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যাকে নিয়ে সুখের সংসারে ভাসতে থাকেন জাওয়াদ। নয় মাস আগে ঘরে আসে দ্বিতীয় সন্তান আয়াতএকমাত্র পুত্র। স্ত্রী এবং পুত্র কন্যাকে নিয়ে নগরীর পতেঙ্গার জহুরুল হক ঘাঁটিতে সরকারি বাসায় বসবাস করতে তিনি। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনও করেছেন একবার।

অত্যন্ত মেধাবী অফিসার হিসেবে আসিম জাওয়াদের চাকরিজীবন ছিল অত্যন্ত বর্ণাঢ্য। কিন্তু চাকরি জীবনের মাত্র ১২ বছর ৫ মাস ৯দিনের মাথায় তাঁর সম্ভাবনাময় জীবনেরই ইতি ঘটে।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আসিম জাওয়াদের আগামী মাস খানেকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকুরিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল। ঢাকায় ট্রান্সফার হলে তাদের সবারই ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা। মা বাবাকেও মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় এনে নিজেদের সাথে রাখার কথাবার্তাও হচ্ছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সব আশা অপূর্ণ রেখে দিল। সকালে যাওয়ার সময় স্ত্রী অন্তরাকে বলে গিয়েছিলেন দুপুরে ফিরবেন, কন্যা এবং শিশু সন্তানকে আদরও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন কী স্বপ্নেও ভেবেছিলেন যে, এই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া!

স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ জীবনের শেষদিনেও মানুষকে বড় ধরনের ক্ষতির কবল থেকে বাঁচিয়ে গেলেন। বিমানে আগুন লেগে যাওয়ার সাথে সাথে তাঁরা যদি বিমান ছেড়ে নেমে যেতেন তাহলে অগ্নিকবলিত বিমানটি জহুরুল হক ঘাঁটি, বিমানবন্দর বা ধারে কাছের অতি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় বড় ধরনের ক্ষতি ঘটাতো। আগুনে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারতো। কিন্তু দুই পাইলট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বিমানটিকে নদীর দিকে নিয়ে যান। জনশূন্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে নিজেরা প্যারাসুটে নামেন এবং বিমানটি নদীতে নিমজ্জিত হয়। শেষপর্যন্ত আসিম জাওয়াদ না বাঁচলেও বহু মানুষের জীবন ও ধনসম্পদ রক্ষা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

মাত্র ৩২ বছর ১ মাস ২০দিন বয়সী আসিম জাওয়াদের জন্য স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ গতকাল চমেক হাসপাতালের মর্গের সামনে উপস্থিত সকলের চোখ ভারি করে তুলছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন নিয়মিত চালুর প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটের মৃত্যু