দেশের উপকূল ও সাগরে মাছের মজুদ বৃদ্ধি ও প্রান্তিক জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও বিকল্প কর্মস্থানের জন্য গৃহিত ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি) বাস্তবায়নে নয়া গতির সৃষ্টি হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ ও কলাকৌশল’ শীর্ষক এক কর্মশালা আজ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সূত্র বলেছে, দেশের উপকূল এবং সমুদ্রে মাছের মজুদ বৃদ্ধি, ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করা ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে সরকার দেড় হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদের ওই প্রকল্পের আওতায় সুনীল অর্থনীতির টেকসই সমৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য মজুদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা, মৎস্য সম্পদ আহরণ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন অধিকতর কার্যকর পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি (এমসিএস) পদ্ধতির বাস্তবায়ন করা, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য চাষের জন্য অবকাঠামো তৈরি ও উৎপাদন সুবিধা তৈরি করা, উপকূলীয় জেলাসমূহে গুচ্ছ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ভালো শিখনসমূহ সম্প্রসারণ করে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা, কমিউনিটি চালিত মৎস্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, প্রান্তিক জেলে সম্প্রদায়ের বিকল্প পেশায় রূপায়ন করে মাছের মজুদ বৃদ্ধি ও মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণ ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। সূত্র বলেছে, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে আইনি লড়াই শেষে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন সৃষ্টি হওয়ায় এই প্রকল্পের গুরুত্ব অত্যন্ত বেড়ে গেছে। এতে দেশের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও সংরক্ষণে অপার এক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এর মধ্যে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৩০১ প্রজাতির শামুক, ছয় প্রজাতির ঝিনুক, আট প্রজাতির লবস্টার, ১৩ প্রজাতির প্রবাল এবং ১১ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপরোক্ত মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ ও মজুদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সমুদ্রসীমায় সকল ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ, ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রজনন মৌসুমে প্রতিবছর ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, ১০ মিটার গভীরতায় বেহুন্দি জাল দিয়ে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ, নদীর মোহনা ও সমুদ্র উপকূলে চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫ লাখ প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা প্রদান করা হয়। এই জনগোষ্ঠী তাদের জীবন জীবিকার জন্য যন্ত্রচালিত ও সাধারণ নৌযান ব্যবহার করে মাছ শিকার করে। বিপুল এই জেলে সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে মৎস্য সংরক্ষণ ও আহরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তাদের ক্ষমতায়ন ও বিকল্প পেশার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর আওতায় ৪৫০টি মৎস্য গ্রামে কমিনিউনিটি সেভিংস গ্রপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১০০ মডেল জেলেগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা এবং এর মধ্যে থেকে ৬০ শতাংশ সুবিধাভোগীকে অর্থ সহায়তা প্রদান, ১০০ মডেল জেলে গ্রামে ফিশারিজ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা, মডেল গ্রামের ১৮ হাজার যুবক-যুবতীকে ভোকেশনাল ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান, ১০০ প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি এবং নিবন্ধন করা, ৯০টি ইয়থ ফেস্টিভাল প্রোগ্রাম ও ৬টি জব ফেয়ার আয়োজন করা, ৪৫টি উপজেলায় জেলে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৪ হাজার জেলে সরাসরি সুবিধা পাবে বলেও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।