বৈদ্যুতিক ফাঁদে মেরে বন্যহাতিকে মাটিচাপা চকরিয়ার হারবাং

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় আরও একটি বন্যহাতিকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের তেইল্লাকাটার চুড়াখোলা গহীন অরণ্যের ভেতর এই ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর সমতল জমি দখলে নিয়ে রোপিত ধানক্ষেত রক্ষায় চারদিকে গাছের খুঁটি পুঁতে তারের ঘেরা দেওয়া হয়। সেই তারে সংযোগ দেওয়া হয় বিদ্যুতের। ওই তারে জড়িয়ে মারা যায় একটি বন্যহাতি। মারা যাওয়া এই হাতির দলে আরো পাঁচটি হাতি থাকলেও তারা প্রাণে বেঁচে যায়। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন। তারা জানান, আগে থেকেই পাহাড়ের চূড়ায় গাছের মগডালে টংঘর থেকে হাতি ধানক্ষেতে নেমে আসার দৃশ্য অবলোকন করছিলেন ধানক্ষেতের অবৈধ মালিক। ৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে মারা যায়। ওই সময় হাতির পালে থাকা আরো পাঁচটি হাতি নিরাপদে চলে যাওয়ার পর ধানক্ষেতের মালিক ও তার লোকজন মারা পড়া হাতিটিকে ঝোপঝাড় দিয়ে ঢেকে দেয়। পরদিন রাতে মৃত হাতিটিকে ধানক্ষেতের পাশে গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
গতকাল ভোরে ওই এলাকায় একদল শ্রমিক ধান কাটতে যায়। তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়া উৎকট গন্ধের উৎস খোঁজেন তারা। এ সময় ধানক্ষেতের পাশে দেখতে পান মৃত হাতি। বনবিভাগের কাছে খবর পৌঁছান তারা। এর পর বনবিভাগ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা, চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনসহ একদল শ্রমিক ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটিকে মাটি খুঁড়ে তুলে আনেন। এরপর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন করা হয়।
মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে যাওয়া চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী আজাদীকে জানান, এই হাতিটিকে আনুমানিক পাঁচ দিন আগে বৈদ্যুতিক শক দ্বারা হত্যা করা হয়। এরপর মাটিচাপা দেওয়া হলেও তা যথাযথ না হওয়ায় চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। মেরে ফেলা হাতিটি পুরুষ প্রজাতির। এটির বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর। হাতিটির দাঁতও অনেকটা বড় হয়েছে।
চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, মৃত হাতিটির বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি, যাতে ল্যাবে পাঠানো যায়। এছাড়া বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি জব্দ করে বনবিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে যেখানে হাতিটিকে মেরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে সেই স্থানটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া বারবাকিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক জানান, বনবিভাগের চূড়ান্ত সিটম্যাপ অনুযায়ী জায়গাটি টৈটং বনবিটের অধীনস্থ। সেখানে উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে বিপুল পরিমাণ সমতল ভূমিও রয়েছে। সেই সমতল ভূমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ধানচাষ করে আসছিলেন হারবাং ইউনিয়নের বেশ কিছু দখলবাজ ব্যক্তি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং হারবাং বনবিট কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, যারা সংরক্ষিত বনভূমির সমতল জমি দখলে নিয়ে ধানচাষ করে আসছিলেন তাদের বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করা হবে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনজুরুল আলম আজাদীকে জানান, চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত জব্বর আহমদের ছেলে আহমদ হোসেন প্রকাশ লুলা এবং তার নিকটাত্মীয়রা সংরক্ষিত বনের ভেতর সমতল জমি দখলে নিয়ে সেখানে ধানচাষ করে। এই বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার অভিযান চালানো হয় সেখানে। কিন্তু তারা বনবিভাগের ওপর মারমুখী আচরণ করার পর সর্বশেষ এ নিয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে দখলবাজদের ডেকে নেওয়া হয়। এ সময় তারা সংরক্ষিত বনের ভেতর সমতল ভূমিতে অনুপ্রবেশ করবে না মর্মে মুচলেকাও দেয়। শেষ পর্যন্ত চক্রটি অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। হাতি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু, আহত ৮
পরবর্তী নিবন্ধঅন্ধকার পথে দাঁড়িয়ে বন্য হাতি, আক্রমণে কৃষকের মৃত্যু