বিষ প্রয়োগে মাছ চুরি ও নিধন প্রসঙ্গে

প্রদীপ ভট্টাচার্য্য | বুধবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ মাছে ভাতে বাঙালির দেশ। তাই বাঙালিদের কাছে মাছ ও ভাত খুব প্রিয় দুইটি নাম। আর এই মাছ হচ্ছে আমাদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস। যা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে অনেকে নিজেদের পুকুরে, ডোবা, জলাশয়ে এবং অনেকে বাণিজ্যিকভাবে দীঘি বা ঘেরে পরিকল্পিত উপায়ে স্বপ্লপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে গ্রামেগঞ্জে নিজেদের মাছের চাহিদা পূরণ শেষে বাণিজ্যিকভাবেও সাবলম্বী হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাছ চাষ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি বেকারত্ব দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় ইদানীং রাতের আঁধারে কৌশলে মাছ চুরি করতে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করছে। সাধারণত বিষ প্রয়োগের ঘণ্টা দুই একের মধ্যে মাছ দুর্বল বা আধমরা অবস্থায় ভাসতে থাকে। তখন সুযোগ বুঝে যতটুকু সম্ভব কৌশলে জাল কিংবা হাতে মাছ ধরে বস্তাবন্দি করে রাত পোহাবার আগেই শহরে কিংবা দূরের কোনও মাছের বাজারে নিয়ে বিষক্রিয়ায় মরা মাছ কমবেশি দামে বিক্রি করে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। আর বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ খেয়ে মানুষেরও চরম ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তা নয় বিষক্রিয়ায় পুকুরের অবশিষ্ট বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড়ো মাছও দিনের বেলায় মৃত অবস্থায় পুকুরে ভাসতে থাকে এবং কিছু পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও পানিকেও বিষাক্ত করে তোলে। এথেকেই পুকুরে বিষ প্রয়োগের ঘটনা বুঝতে পারে মালিক পক্ষ। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যার করণে প্রতিপক্ষের ক্ষতিসাধনে দুর্বৃত্তরা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েও এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। অনেক সময় এই সমস্ত দুর্বৃত্তদের হাতেনাতে ধরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিললেও কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এর কোন প্রতিকার নেই। এরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোন কোন সময় এই সমস্ত দুষ্কৃতকারীদের ধরে স্থানীয় বা থানা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করলেও তারা দুই পক্ষের সমঝোতা করিয়ে বিষ প্রয়োগে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ নিধন করেও মাত্র কয়েক হাজার টাকা জরিমানা করিয়ে গুরু পাপে লঘুদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্ত দুষ্কৃতকারীদের সাথে রাজনৈতিক বা অন্যভাবে প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ থাকায় কোন দণ্ড ছাড়াই এসমস্ত অপরাধী পার পেয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। এই জঘন্যতম অপরাধের বিপরীতে যথাযথ আইনের প্রয়োগ বা শক্ত হাতে তাদের লাগাম টেনে ধরা না গেলে কিংবা দ্রুতসময়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে দেশের মৎস্যসম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি অনেকে মাছ চাষের উৎসাহও হারাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী : দাবি রাষ্ট্রীয় খেতাবের
পরবর্তী নিবন্ধআজ চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস