বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী : দাবি রাষ্ট্রীয় খেতাবের

রুমানা নাওয়ার | বুধবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

যুগে যুগে কালে কালে এমন কিছু ক্ষণজন্মা মানুষ জন্মায়। যাদের অবদান কখনো জাতি ভুলতে পারে না। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী তেমনি একজন মানুষ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যে বয়সে হেসে খেলে জীবনকে উপভোগ করার সময়। সে কিশোর বয়সে তিনি দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বুকে পিঠে মাইন বেঁধে শত্রুর জাহাজকে উড়িয়ে দিয়েছেন। দুঃসাহসিক সে কাজ তিনি একাই করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ জীবনকে বিপন্ন করে রাতের আঁধারে ১৬ বছরের এক কিশোরের জাহাজ উড়িয়ে দেওয়া রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এ যেন পাতালপুরীর দৈত্যকে মেরে রাজকন্যাকে উদ্ধার করা। স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকাটাকে ছিনিয়ে আনতে তাঁর দুঃসাহসিক এ অভিযান মাইলফলক হিসাবে কাজ করে। সারাবিশ্বে তাঁর এ নৌ অপারেশন এর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা নড়েচড়ে বসে।

এ একটা গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন মুক্তিযুদ্ধকে ফলপ্রসূ করতে ত্বরান্বিত করে। আ্যভলুজ ধ্বংসের সে দুঃসাহসিক গল্প চাচার মুখে শুনিনি কখনো। বীর পুরুষ আমার চাচা আবু মুসা চৌধুরী। নিজেকে অন্তরালে রাখতে পছন্দ করতেন। এতবড় মাপের একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কোনও অহংকার অহমিকা ছিলো না। মাটির মানুষ চাচা আবু মুসা চৌধুরী। বাংলার প্রকৃতির মতো সহজ সরল অকপট। ভালোবাসতেন সবাইকে। আপন পর যেই হোক। পরম স্নেহে বুকে টেনে নিতেন। চাচার বীরত্বগাথা শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি। চোখের দেখা যদিও গেল কবছর আগেই হলো। যতটুকু দেখলাম যাই দেখলাম তাই বেশি। মন উজাড় করা আদর স্নেহ ভালোবাসার পেয়েছি চাচার সান্নিধ্যে, তার কাছ থেকে। আমাকে যেমন তেমন আমার দুসন্তানকেও। নানাভাই বলে বুকে টেনেছেন। আমার আব্বার (বজল আহমেদ সিকদার) ঘনিষ্ঠ জন ছিলেন চাচা। আমাদের আর এক চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পুনঃ পুনঃ নির্বাচিত সফল ইউপি চেয়ারম্যান জনাব হাবিবুর রহমান সিকদার চাচার আদর্শে প্রতিপালিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর আদর্শ দেশপ্রেমকে পুঁজি করে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিতে। বড়ভাই হাবিবুর রহমান সিকদারই তাঁর আদর্শ ছিলেন। নারায়ন হাট বাজার উচ্চ বিদ্যলয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী আবু মুসা চৌধুরী। একজন কিশোর। দেশপ্রেমের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। মরণ বরণকে তুচ্ছ করে এগিয়ে গেছেন প্রতিটি অপারেশনে। চাচার এসব বীরত্বগাথা যতই পড়ি যতই শুনি পুলকিত হই, গৌরবান্বিত হই। যুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে শারীরিক ক্ষত বয়ে বেরিয়েছেন আজন্ম। মৃত্যুকে বরণ করেছেন দেশের মাটিতে এসেই। কারণ মা মাটি দেশকে ভালোবাসতেন বলেই আমেরিকা থেকে দেশে বেড়াতে আসা সময়টাতে চির নিদ্রায় চলে গেলেন চাচা। এদেশের মায়াভরা আলপথে হেঁটে হেঁটে প্রকৃতির সুধা পান করে হারিয়ে গেলেন চিরতরে। আমরা হারালাম একজন বিরল মুক্তিযোদ্ধাকে। যিনি কোনও যশ, খ্যাতির আশা করেননি কোনওদিন। নিজমুখেও উচ্চারণ করতেন না তার ক্ষোভ আক্ষেপের কথা। তবে ১৬ বছরের যে কিশোরটি যুদ্ধ জাহাজ গুড়িয়ে দেওয়ার সাহসী ইতিহাস সবারই জানা উচিত। এ মহান মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় খেতাব পাওয়া সময়ের দাবী। নিভৃতচারী আবু মুসা চৌধুরীরা কালের গর্ভে বিলীন হবে না কখনো। তাঁর নামে স্থাপন হোক সড়ক, তোরণ, পাঠাগার কিংবা ম্যুরাল। তবেই নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে এসব সাহসী অকুতোভয় মানুষটির কথা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুরবস্থায় কর্নেল হাট বিপণি প্রতিকার চাই
পরবর্তী নিবন্ধবিষ প্রয়োগে মাছ চুরি ও নিধন প্রসঙ্গে