ওরা ফিরে গেলেন ক্যাম্পাস জীবনে

৫ হাজার চবিয়ানের মিলনমেলা, মন্ত্রী-এমপিদের সংবর্ধনা

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

বেলা আড়াইটা। সূর্য ঠিক মাথার ওপর। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার তখনো প্রায় ফাঁকা। একটু সময় গড়াতেই লোকারণ্যে ভরপুর পুরো কনভেনশন। একে একে দেশের নানা জায়গা থেকে আসতে থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে আনন্দে মেতে উঠে চবিয়ানরা। মুহূর্তেই পরিণত হয় মিলনমেলায়। বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের ঈদ পুনর্মিলনীর কথা। ‘সাফল্যের উচ্ছ্বাসে, উৎসব আনন্দে’ প্রতিপাদ্যে প্রথমবারের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সাবেক চবিয়ানদের মধ্যে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দুপুর আড়াইটায় মিলনমেলা শুরু হয়। প্রায় পাঁচ হাজার সাবেক শিক্ষার্থী এই মিলনমেলায় অংশ নেন। অল্প সময়ের জন্য যেন সবাই ফিরে যান ক্যাম্পাস জীবনে। হাসিঠাট্টা আর আড্ডায় মেতে উঠেন সবাই। কেউবা স্মৃতিকাতর হয়ে গানে মেতে উঠেন। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কেউ চাকরিতে ব্যস্ত আছেন কেউ আছেন রাজনীতিতে। কেউবা সাংসারিক কাজে কেটে যায় দিন। আজকের পুনর্মিলনীতে এসে যেন তারা ফিরে যান ক্যাম্পাস জীবনে। বন্ধুদের পেয়ে সেলফির জুড়ি নেই। স্মৃতিটাকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে ব্যস্ত অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের আবদুল সালাম এসেছেন মিলনমেলায়। বন্ধুদের মধ্যে তেমন কেউ না আসলেও আনন্দে তার যেন সীমা নেই। স্বল্প সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে ফিরে যান বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কত কত আড্ডা দিয়েছি। শাটলে আসাযাওয়া ক্লাস শেষে বাসায় ফেরা। সব যেন চোখের সামনে ভাসছে। বিকাল তিনটায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন।

সংবর্ধিত অতিথিরা হলেন, সিডিএ সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম৮ আসনের এমপি আবদুস ছালাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী, চট্টগ্রাম৬ আসনের এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, ফেনী১ আসনের এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামীমা হারুন লুবনা, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, কক্সবাজার২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল।

সম্মাননা পর্বে এলামনাই এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল করিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন। এসময় সংবর্ধিতদের উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে বরণ করো নেওয়া হয়। পরে সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। এসময় সংবর্ধিত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। আয়োজকদের অনেক ধন্যবাদ।

মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। এই প্রতিষ্ঠান অনেক সুনাম অর্জন করেছে। সামনে আরও সুনাম অর্জন করুক। এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, আজকের দিনটি অনেক স্মরণীয় দিন। আজকে অনেকেই এখানে উপস্থিত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি। এটা আমাদের প্রিয় ঠিকানা। একটাই কথা সেটা হলো আমরা সবাই যাতে একসাথে বসতে পারি। প্রাণখুলে কথা বলতে পারি।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, সংবর্ধিতদের মধ্যে আমরা সবচেয়ে জুনিয়র। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, অনেকদিন পর এমন প্রোগ্রামে এসেছি। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য।

এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য। আজকে খুব খুশি লাগছে সবাইকে দেখে। আবদুস সালাম বলেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে আমি একাউন্টটিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছি। আজকের সম্মাননা পাওয়ার জন্য পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এমপি শামীমা হারুন লুবনা বলেন, আমার জ্ঞানের দ্বার খুলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমি অনেক ঋণী। আজকে অনেক ভালো লাগছে আসতে পেরে। আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, আজকে ট্রেনের ছাদে করে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ছে। এরকম নানা স্মৃতি আজ মনে ভেসে উঠছে। এরকম প্রোগ্রাম পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে করার অনুরোধ থাকবে দায়িত্বশীলদের প্রতি।

চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে জ্ঞান সৃজন ও বিতরণ। আমি উপাচার্য হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কথাটিই বলেছি। আমি ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। আগামী ডিসেম্বরে সমাবর্তন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আপনারাও আমন্ত্রিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাংকিংয়ে নিয়ে আসার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে এলামনাই এসোসিয়েশন আশা করি সহযোগিতা করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউল শফি মন্ডল ও রাখি শবনম। সবশেষে ব্যান্ড ফিডব্যাকের পরিবেশনা ও প্রীতিভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপজেলায় ভোটে এসে বিএনপির পদ হারালেন ৭৩ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধআলোচনায় সাবেক ২০ ছাত্রনেতা