আলোচনায় সাবেক ২০ ছাত্রনেতা

নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন বার্ধক্য ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে পদ হারাতে পারেন বর্তমান কমিটির অনেকে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন প্রথম সারির এক ঝাঁক মেধাবী ছাত্রনেতা। দীর্ঘ দেড় দশক পর সম্মেলন হবে, প্রায় ১১ বছর পর নতুন কমিটি হবে। এই আশায় উন্মুখ হয়ে আছেন চট্টগ্রামে প্রথম সারির সাবেক ২০ ছাত্রনেতা। সাবেক এ ছাত্রনেতাদের অনেকেই নগর যুবলীগের শীর্ষপদে ছিলেন, অনেকেই কেন্দ্রীয় যুবলীগে ছিলেন, অনেকেই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা এখন নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গনে সাবেক এ ছাত্রনেতাদের নামই আলোচিত হচ্ছে। ৯০ এর দশকের উত্তাল রাজপথের ছাত্রলীগের লড়াকু নেতারা দলের জন্য দীর্ঘ বছরের পর বছর জেলজুলুমমামলাহামলানির্যাতনের শিকার হয়ে এখনো দলের আদর্শে অবিচল রয়েছেন। পদপদবী ছাড়া নিজেদের কর্মীসমর্থকদের নিয়ে বিরোধী দলের অবরোধজ্বালাওপোড়াও আন্দোলনে রাজপথে দলের জন্য এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। সাবেক এ ছাত্রনেতাদের অনেকের রাজপথের আন্দোলনসংগ্রামের ত্যাগের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবগত আছেন।

এ ছাত্রনেতাদের অনেকেই এবার নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে এসে চমক সৃষ্টি করতে পারেন, কমিটিতে শীর্ষ পদ থেকে সম্পাদকীয় পদ এবং নির্বাহী সদস্য পদে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান কমিটির অনেকেরই বার্ধক্য এবং বয়সের কারণে পদ ছেড়ে উপদেষ্টা কমিটিতে স্থান হতে পারে। আবার নিষ্ক্রিয়তার কারণে বর্তমান কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা পদ হারাতে পারেন। বার্ধক্যের কারণে বর্তমান কমিটির এরকম প্রায় ১০ থেকে ১৫জনকে এবার দলের মায়া ছাড়তে হবে। তাদের যেতে হবে উপদেষ্টা কমিটিতে। এই স্থান পূরণ করবেন তরুণরা (সাবেক ছাত্রনেতারা)

নগর আওয়ামী লীগের এবারের নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনেকেই নানানভাবে চেষ্টাতদ্বির করছেন। তাদের মধ্যে যারা আলোচনায় রয়েছেনতারা হলেন নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এএইচ এম জিয়া উদ্দিন, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রায়হান ইউসুফ, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত তালুকদার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন, ওমর গনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কেবিএম শাহজাহান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী, সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ড. মাসুম চৌধুরী, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসাইন, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, সাবেক যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান ফেরদৌস।

প্রতি তিন বছরে একবার করে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও তা গত দেড় দশকেও অনুষ্ঠিত হয়নি নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

গত দুই বছরে চার দফা নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করার পরও নগর রাজনীতির গ্রুপিংয়ের কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্র থেকে স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চতুর্থবারের মত নগরীর কিং অব চিটাগাং কনভেশন হলে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার কয়েকদিন আগেই কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলন স্থগিত করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।

কিন্তু এর মধ্যে বর্ণাঢ্য ভাবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনের পরপর দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটিও হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ১১ বছর পার হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনবারের মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। তবে সেবার সম্মেলন হয়নি, কমিটির ঘোষণা এসেছিল ঢাকা থেকে। তার আগে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। ২০১৭ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পর কমিটির সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। পরবর্তীতে গত বছর তিনি ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ সভাপতি হন। কিন্তু সম্মেলন আর হয়নি।

২০২২ সালের ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা হয়নি।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ৩১ মার্চের বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নির্দেশনার পর থেকেই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ প্রাণচাঞ্চল্য ভাব ফিরে এসেছে। ৫ জুন চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওরা ফিরে গেলেন ক্যাম্পাস জীবনে
পরবর্তী নিবন্ধএপ্রিলে ৬ থেকে ৮ দিনের পূর্বাভাস থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে একদিন