বাস্তুতন্ত্র পুনর্গঠন সম্ভব

রিতু পারভী | শনিবার , ৩ জুন, ২০২৩ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ধরিত্রীর অপূরণীয় ক্ষতি করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থার সাথে যুদ্ধ করে সুস্থ, কার্যকরী বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখা ভীষণ কঠিন এক কাজ। এই অবস্থায় কিছু মানুষের লড়াই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে। তাঁরা বুঝিয়ে দেন এখনও চাইলে কিছু করা সম্ভব।

ভারতের আসাম রাজ্যের পূর্ণিমা দেবী বর্মন তাদেরই একজন। অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাণী গ্রেটার হেল্পার স্টর্ক বা হাড়গিলা পাখি সংরক্ষণে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন পূর্ণিমা দেবী। প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে তাঁর এই ভূমিকার জন্য তাঁকে ‘গ্রীণ অস্কার’ নামে খ্যাত পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ’ প্রদান করা হয়।

ডক্টর পূর্নিমা দেবী বর্মন একজন বন্যপ্রাণজীববিজ্ঞানী। আসামের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পূর্নিমা ইকোলজি এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজিতে বিশেষজ্ঞ। হাড়গিলা পাখি আই ইউ সি এন এর তালিকায় লাল দাগে জীবন সংশয় নিয়ে তালিকাভুক্ত যা সারাবিশ্বে আছে মাত্র ১২০০ থেকে ১৪০০ এবং শুধু আসামেই আছে ৬০০ থেকে ৮০০ র মত। এই অতিবিরল পাখি সংরক্ষণে পথে নামেন পুর্নিমা। যেহেতু পাখিগুলো শহর এলাকায় বাস করে আসছিল এবং শহরের ভাগাড় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছে তাদের আশ্রয় ছিল এদের বাঁচানো ছিল কঠিন। দূষণ, মানুষের সচেতনতা খাদ্যাভাব ইত্যাদি অনেক কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের বাঁচানো ছিল চ্যালেঞ্জ। পুর্নিমা দেবী বর্মন সেই জায়গায় কাজে নেমে পড়েন।

সংরক্ষণে পুর্নিমা দেবী দারুণ এক কাজ করেন ‘হাড়গিলা আর্মি’ গঠন করার মাধ্যমে। প্রায় ৭০ জন নারীকে নিয়ে তিনি এক বিশেষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এই আর্মি দল হাড়গিলা পাখি রক্ষায় সর্বোচ্চ কাজ করেন। যে গাছে হাড়গিলার বাস সে গাছ কাটা যাবে না, কোন হাড়গিলা পাখি অসুস্থ হলে দ্রুত সেবা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলা, স্কুল, কলেজে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে মানুষকে সচেতন করে তোলা, পথনাটক করে মানুষকে জানানো, এমনকি কাপড়ের নকশায় হাড়গিলার মোটিফ তৈরি করে এর সংরক্ষণ দারুণ ভূমিকা রাখে ‘হাড়গিলা আর্মি’। বিশেষভাবে নারীদের দ্বারা গঠিত এই আর্মি সংরক্ষণ মুভমেন্টের ভিন্ন এক দিক।

ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপের দদরা, পাচারিয়া, শিঙিমারি গ্রামে হাড়গিলা বাঁচাতে ‘হাড়গিলা আর্মি’ বর্তমানে প্রায় ১১০০০ সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। কবিতা, গল্প, গানে হাড়গিলা উঠে এসেছে, শাড়িসহ অন্যান্য বুননে নকশায় এই বিলুপ্ত প্রায় পাখিটি স্থান পেয়েছে, বেবি শাওয়ার করে উদযাপন করা হয় নতুন বাচ্চার জন্ম। এই সব কিছু করা হয়েছে বাস্তুতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কীভাবে একটা মুভমেন্ট সফল করা যায় তার এক বাস্তব উদাহরণ ‘হাড়গিলা আর্মি’। ইউনাইটেড ন্যাশন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম, ইউএনইপি পুর্নিমা দেবী বর্মনকে সংরক্ষণে ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ পুরস্কার প্রদান ওয়াইলড লাইফ কনজারভেশনে ‘চাইলেই বাস্তুতন্ত্র পুনর্গঠন করা সম্ভব’ ধারণাকে সামনে তুলে আনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চবি এলামনাই সেন্টারের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধঅপরাজিত মেয়েরা