একটু ভাবুন

নিগার সুলতানা | শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

আপনার কাছে পবিত্রতার সংজ্ঞা কি? বই পুস্তক কিংবা নেট দুনিয়ায় যেখানেই পবিত্রতার সংজ্ঞা খুঁজবেন, দেখবেন পবিত্রতার সাথে মানব দেহের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। সাথে ধর্মীয় নীতির কথা উঠে আসবে নিশ্চিত। আপনার মুক্ত মন ভাবছে পবিত্রতা শুভ্র সুন্দর কিছু। তবে সত্যি কি আদৌ এমন? এই ‘পবিত্রতা’ শব্দ ব্যবহার করেই নারীকে সবচেয়ে বেশি বন্দী করে রাখা যায়। কেননা মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে ‘পবিত্র’ শব্দটি শুনলে সর্বপ্রথম আপনার ধর্মীয় বাণীর কথা মাথায় আসবে। যেকোনো ধর্মের নীতিমালায় দেখবেন বেশিরভাগ পবিত্র শব্দগুলো নারীর জন্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন তথাকথিত এই পবিত্র থাকার সিলেবাসের বাইরে নারী গেলেই তাকে দ:ুশ্চরিত্রা প্রমাণ করা যায়। তাছাড়া পবিত্র থাকার বেলায় আমরা আমাদের মনের শুভ্রতাকে যত না প্রাধান্য দিই তার থেকে বেশি শরীরের পবিত্রতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এখনো আমাদের সমাজে ‘পিরিয়ড’ হলে সে নারীকে অপবিত্র ধরা হয়। এটি না হয় খানিকটা বদলেছে কিন্তু বিবাহ বহির্ভুত নারীর একবার যৌন সঙ্গম হলেই, সকলে তাকে অপবিত্র বস্তু ভাবেন। এখন এই সঙ্গম তার ইচ্ছেতে হোক আর ইচ্ছের বিরুদ্ধে, দুই ক্ষেত্রেই নারীকে দু:শ্চরিত্রা আখ্যা দেয়া হয়। কারণ কি? নিখুঁতভাবে আমাদের মাথায় খুব ছোটবেলাতে পবিত্রতা নামক একটি ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শরীরবৃত্তীয় পবিত্রতার সংজ্ঞায় থাকে একজন নারীকে কোনো পরপুরুষ দেখলে, স্পর্শ করলে সে নারী আর পবিত্র থাকেন না। মাসিক চলাকালীন নারী অপবিত্র থাকে তাই সে নারীর স্পর্শে অন্য জিনিস অপবিত্র হয়ে যেতে পারে। নারীর শরীর সবসময় পবিত্র থাকে না, তাই তাকে ধর্মীয় কাজে রাখা যায় না। এই ভাবনাগুলো আমাদের ভেতর আছে বলেই আমরা দুশ্চরিত্রা আখ্যা পাই। ধরুন একজন পুরুষ যে কিনা, যেকোনো নারীকে ধর্ষণের মনোভাব রাখেন কিংবা করেন, দুর্নীতি করেন, ঘুষ নেন, নারীদের ইভটিজিং করেন ইত্যদি। কিন্তু এই পুরুষগুলোকে সমাজের কোনো মানুষ কখনো দুশ্চরিত্র আখ্যা দেবেন না কারণ পুরুষের চরিত্রই এমন ভাবা হয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেই বলা আছে পুরুষ মানুষের অন্য নারীকে পাওয়ার বাসনা থাকবে, হাজার হাজার বিয়ে করা জায়েজ, পুরুষ মানুষকে শয়তানে ধোকা দেয় ইত্যাদি। এখন ভাবুন তো ধর্মের বাণীতে কিংবা সমাজের রীতিতে ‘পবিত্র’ শব্দটি কেবল নারীর জন্যেই কেন ব্যবহার হয়েছে? মূলত পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে এই নিয়ম তাদের নিজেদের বানানো এবং এর ব্যবহার কেবল নারীদেরকে বন্দী করে রাখতে। শুধু নারীর শরীর নয় সাথে নারীর মনের ওপর জোর খাটাতে এই রীতিগুলো এত প্রবলভাবে মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ এখন নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক হয়ে উঠছে।

সাধারণত ভারতীয় সিনেমা, বিশেষ করে নতুন সিনেমাগুলো দেখার রুচি না ধরলেও অনেক সময় নিরপেক্ষ থেকে দেখার চেষ্টা করি। কিছুদিন আগে একটি সিনেমা দেখেছি নাম ‘ব্রহ্মাই জানেন গোপন কম্মটি’। মূলত সিনেমাতে দেখানোর চেষ্টা করেছে পুরোহিত একজন নারীও হতে পারেন। কেননা শাস্ত্রে কিংবা বেদে কোথাও বলা নেই নারী ধর্মীয় এসব কাজ করতে পারবেন না। বরং নারী মাসিক চলা কালীন সময়েও পূজোর জিনিস যোগাড় করতে পারবেন। মা সরস্বতীও মাসিক চলাকালীন ভোগ রান্না করতেন। সিনেমার আলোচনা পরে কখনো হবে, আমার কেবল একটি প্রশ্ন,পুরো সিনেমাতে কোথাও নায়িকাটি বলতে পারেননি শাস্ত্রে কিংবা বেদে বলা আছে পুরোহিত একজন নারীও হতে পারেন। নায়িকাটি কিছু শাস্ত্রের সংস্কৃত বাণীর সাথে বাংলাও বলেছেন কিন্তু তাতে কেবল আছে মাসিক চলাকালীন নারীরা ভোগ রান্না করতে পারবে।

পবিত্রতা’ আর ‘দু:শ্চরিত্রা’ নামক শব্দগুলো আমাদের মাথায় গেঁথে দেয়া হয়েছে যা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুগের পর যুগ । নারীর কেন এত পাপের ভয়? পাপপবিত্রতার সব নিয়ম কেন নারীকেই কেন্দ্র করে? একটু ভাবুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুদ্র প্রকৃতিকে পাঠ করবে এমন খনা কই?
পরবর্তী নিবন্ধরশিতে ঝুলছিল মাথা, দেহ পড়েছিল মাটিতে