দেশ হতে দেশান্তরে

সেলিম সোলায়মান | রবিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাণ্ডা যুদ্ধ নাকি স্নায়ু যুদ্ধ?

“কি ব্যাপার ঐ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কি দেখছ ? বাইরের আবহাওয়া কেমন ? এখন কি তুমি যাবে বাথরুমে? নাকি অভ্রকে ঘুম থেকে তুলে পাঠাবো?” উপর্যুপরি এই প্রশ্নের ফুঁৎকারে পাখীর নীড় বিষয়ক চিন্তা নীড় ছেড়ে ফুরুত করে গেল উড়ে! দ্রুত জানালার কাছ থেকে সরে এসে স্নানঘরের দিকে এগুতে এগুতে বললাম, না থাক, ও বেচারা ঘুমাক আরও কিছুক্ষণ। আমিই বরং ঘুরে আসি ওখান থেকে।
শেভ করতে করতে ভাবছিলাম যে গোসল করব কিনা। একবার মনে হল নাহ, এখন করার দরকার নাই বরং সারাদিন ঘোরাঘুরি করে এসে বরং গোসল করে সারদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলব সেটাই বরং ভাল। আবার মনে হল নাহ, গতরাত যেহেতু কেটেছিল বিরক্তিকর জাগরণ, আধো জাগরণ আর আধো ঘুমে, তাতে শরীর হয়ে আছে যেমন আড়ষ্ট তেমনি মেজাজও হয়ে আছে একটু খিটখিটে, এমতাবস্থায় কুসুম গরম জলের একটা গোসল সারাদিনের ঘোরাঘুরির জন্য শরীর ও মেজাজ দুটোকেই চাঙ্গা করবে।
অতএব গোসল সেরে, বেইজিং ট্যুরের জন্য মোটামুটি আধাআধি তৈরি হয়ে, মানে মাথার টুপি, মাফলার, হাতমোজা আর গায়ে ইতোমধ্যে চড়ানো তিনচার স্তরের গরম কাপড়ের উপর চড়ানোর জন্য আনা জ্যাকেটটি চড়ানো ব্যতিরেকে বেরুলাম স্নানঘর থেকে।
রুমে ঢুকে দেখি এরই মধ্যে লাজু কুনমিং থেকে বয়ে আনা মুফতে পাওয়া ফলফলাদি, ওর পছন্দে কেনা কেক বিস্কিট আর গতরাতে আমার ডিনার অভিযানে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার সময় কিনে আনা নানান ফলের জেলির পুর দেয়া বনরুটি গুলো দুই টেবিলে সাজিয়ে সবার জন্য নাস্তার একটা জবর জং আয়োজন করায় ব্যস্ত। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখেই বলল অভ্রকে ঘুম থেকে তুলে স্নানঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।
বিনাবাক্যব্যয়ে বিছানার পাশে গিয়ে অভ্রর গালে চুমু দিয়ে, মৃদু ধাক্কা দিতে দিতে বললাম, উঠে পড়ে রেডি হও বাবা। বেরুবো আমরা বেইজিং শহর দেখতে। বলা যায় না কপাল ভাল থাকলে আজ কিন্তু স্নো ফলও দেখা যেতে পারে!
এতে কোন দ্বিরুক্তি না করে চোখ ডলাডলি করতে করতে অভ্রর উঠে পড়া দেখে মনে হল, আসলে ঘুম ওর আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। অপেক্ষা করছিল শুধু আমাদের ডাকের।
বিছানা থেকে নেমে স্নানঘরমুখি ও রওয়ানা করতেই পেছন থেকে মায়ের হুকুম জারী হল “অভ্র শোন, ভাল করে, উপরে নীচে ব্রাশ ঘষে দাঁত মাজবে । তারপর চোখ মুখ ভাল করে ধুয়ে , মুখে হাতে পায়ে লোশন মেখে তার কাপড় পরবে।”
নাহ এ আদেশ জারী করেই নিশ্চিন্ত হতে পারল না মনে হয় লাজু। নাস্তা সাজানো বাদ দিয়ে তাই উঠে অভ্রর পিছু পিছু চলে গেল নিজেও স্নানঘরে । একই সাথে তখন আমার মনে হল, যাই অন্য রুমে । গিয়ে দেখি দীপ্র বেরিয়েছে কি না স্নানঘর থেকে । স্নানঘরে দীর্ঘ সময় কাটানো তা তো ওর সকল সময়ের জন্য সর্বজনবিদিত ব্যাপার । বলা যায় না ইতিমধ্যে তা নিয়ে ফুপ্পির সাথে জেদাজেদি করে, ইচ্ছে করেই আরও বেশী দেরী করছে কি না ও। এছাড়া ওকেও , ঐ ভালমতো হাতে মুখে লোশন ফোসন মেখে নেবার কথা বলে দিতে হবে। আর তা ন করলে, এ রুমে আসার পর মায়ের জেরার মুখে যখন এ ব্যাপারে তার অবহেলার কথা প্রকাশিত হয়ে পড়বে, তখন আবার এ নিয়ে লেগে যাবে খিটিমিটি । তাতে আবার এই বেইজিং হিমের মধ্যে ননদ ভাবী বিষয়ক একটা অকারণ ঠাণ্ডা স্নায়ুযুদ্ধের সূত্রপাত হয়ে যেতে পারে সাত সকালেই ! দীপ্র যেহেতু ছিল ফুপ্পির সাথে , অতএব মায়ের চোখে পড়া তার নিজেরই যেকোন অবহেলাপ্রসূত অযত্নের দায়, আমাদের দেশের ননদ ভাবী সম্পর্কের সূত্র মাফিক দীপ্রর ফুপ্পিই টেনে নেবে তার ঘাড়ে। ফলশ্রুতিতে তাতে তাৎক্ষণিক কোন শাব্দিক বিস্ফোরণ না ঘটলেও, অনিবার্যভাবে দিনব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধের অবতারণা যে হবেই তাতেই সন্দেহ নেই কোনো । আশির দশক পূর্ব সমাজতান্ত্রিক শিবির আর পুঁজিবাদী শিবিরের মধ্যকার সেই ঠাণ্ডা স্নায়ুযুদ্ধ পৃথিবীব্যাপী যে একটা অস্বস্তিকর অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল সার্বক্ষণিকভাবে, পারিবারিকভাবে ওইরকম অস্বস্তিকর অবস্থা এড়াতেই আপ্রাণ চেষ্টা করি সবসময় । তারপরও কি পারি তা?
বৈশ্বিক সেই ঠাণ্ডাযুদ্ধ নাকি স্নায়ুযুদ্ধের লেজ ধরেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার মনে পড়ল। আর তা হল সেই সময়ের সেই ঠাণ্ডাযুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধের ঐ ঢাক ঢাক গুড় গুড় সেই অস্বস্তিকর সময়টিতে, সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও মাওয়ের চায়না একদম শক্তভাবে মার্কিনীদের সাথে গাঁটছড়া না বাঁধলেও মৌনভাবে হলেও থাকতো তাদের সাথেই। আর এটির বড় ভুক্তভোগী তো হয়েছিলাম আমরা ১৯৭১ এ। সে যাক সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতন ঘটায় পৃথিবী সেই ঠাণ্ডা স্নায়ুযুদ্ধ থেকে মুক্ত হলেও, অন্যদেশের কথা জানি না, আমাদের দেশের ঘরে ঘরে সেই সরব নীরব স্নায়ুযুদ্ধ এখনো বিরাজমান । যার এক পক্ষে থাকে একক বা শাশুড়ি বা ননদ বা দুজনের দ্বিপাক্ষিক জোট, অনপক্ষে থাকে ঘরের বউ বা ভাবী। আর মাঝখানে ক্যাবলার মত পড়ে থাকে সেই ভ্যাবলাকান্ত পুত্র যে নাকি স্বামীও।
ঐ রুমের দরজায় এসে বেল টিপতেই, হোটেলের ঢাউশ সাইজের ধবধবে সাদা একটা টাওয়েল গায়ে কোমরে জড়িয়ে, ছোট আরেকটি দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে দীপ্র দরজা খুলে দিতেই বুঝলাম, স্নানঘরের ক্রিয়াকর্মাদি শেষে স্নানঘরের দরজা খুলতেই সে শুনতে পেয়েছে ডোর বেলের শব্দ। তাই দরজা খুলে দিয়েই সে ফের সুরুত করে ঢুকে পড়েছে স্নানঘরে , পুরোপুরি তৈরি হয়ে বের হবার জন্য। এতে কিছুটা নিশ্চিন্ত মনে রুমে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসতে বসতে একটু উঁচু গলায় এলান করলাম দীপ্রকে, ঐ রুমে অভ্রর জন্য জারী হওয়া মায়ের হুকুম। বললাম, ও যেন ভাল মতো হাতে, পায়ে, মুখে, গায়ে, লোশন মাখিয়ে নিয়ে তারপর তার যাবতীয় রকমের গরম কাপড় যেন চড়ায় গায়ে।
আমার এই কথার জেরে , হেলেনও গিয়ে ঢুকল স্নানঘরে, দীপ্রকে সাহায্য করার জন্য। তাতেই একটা ছোট্ট শোরগোল তৈরি হল স্নানঘরে, দীপ্রর প্রবল আপত্তির কারণে। এই কিছুকাল আগেও, জামা কাপড় পরে তৈরি হবার ব্যাপারেও মায়ের চেয়ে ফুপ্পির উপর বেশি নির্ভর করলেও , ইদানীং তা আর সে সহ্য করছে না। কারণ সে যে বড় হয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য এটি তো তার অত্যন্ত একটি মোক্ষম সুযোগ। ঐদিকে হেলেনও নাছোড়বান্দা। যারই ফলশ্রুতিতে স্নানঘরে তৈরি হয়েছে এই ছোটখাট অসন্তোষের আবহ।
এইমাত্র তৈরি হওয়া স্নানঘরের এই অসন্তোষের লেজ ধরে মনে হল আমার, আচ্ছা ৯০ দশকে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ভেঙ্গে পড়ায় শুরুর দিকে সবাই কিন্তু ভেবেছিল , এইবার হয়তো পৃথিবী হয়ে উঠবে শান্তিময়। ন্যাটো হুংকার আর ওয়ারশ জোটের গর্জনের দিন অবশেষে শেষ হল পৃথিবীতে এবার। কিন্তু আসলেই কি হয়েছে তা? ঐ দুই মোড়লের হুংকার আর পাল্টা গর্জনে সারা পৃথিবীতে ঐ সময় ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করলেও, এখনকার এই এক মোড়লের মাতব্বরির কালে তো অহরহই হচ্ছে দিকে দিকে গরম গরম যুদ্ধ। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে, আফগানিস্তানে, আর আফ্রিকায় হচ্ছে নানান খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ। আর সে যুদ্ধের কুশীলব নানান নামের নানান হিংস্র জঙ্গিগোষ্ঠীর ছোবল থেকে পার পাচ্ছে না, খোদ বড় মোড়লও। যার বড় প্রমাণ ঐ টুইন টাওয়ারে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় দুর্ঘটনাটি। তার মানে কি? মানুষ নামের এই প্রজাতির মাথায় সেই যে অন্যেরটা কেড়ে নেবার, নিজের যথেষ্ট থাকার পরও অন্যের সম্পদের উপর নজর দেবার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল কোন প্রাগৈতিহাসিক কালে, সে থেকে কি তার মুক্তি নেই কোন? সারাক্ষণই কি তার দরকার হয়, ঠাণ্ডা না হয় গরম গরম যুদ্ধ?
এরই মধ্যে ফুপ্পি ভাইপোর দ্বৈরথের মধ্যেও মোটামুটি বেইজিং হিমে হিমযাত্রার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে দীপ্র আর হেলেন স্নানঘর থেকে বেরুতেই, ওদের নিয়ে রওয়ানা করলাম নাস্তার উদ্দেশ্যে।
এ রুমে ঢুকতেই দেখি, এক্কাবের হিমালয় যাত্রার জামাকাপড় পড়ে প্রস্তুত হয়ে অভ্র নাস্তা খাচ্ছে বসে, আর লাজু অপেক্ষা করছে আমাদের ফেরার। অতএব আর তো সময়ক্ষেপণ করার কারণ নেই কোনো। বসে পড়লাম দু ভাগ হয়ে তিন জন দুই টেবিলে।
মানে আমি এসে বসলাম সোফার সামনের গোল টেবিলটায়, যেখানে একাকী অভ্র নাস্তা করছে। টেবিলে থাকা গত রাতের কেনা দুটো বনরুটি দেখেই মনে পড়ল সেই মিষ্টি আলুর পুর দেয়া রুটিটার কথা, যেটি আমি নিজে খাব ভেবেছিলাম। ওটার স্বাদ কেমন হবে তা যেহেতু নিশ্চিত নই, সেইজন্যই অন্য কাউকে ঝুঁকিতে না ফেলে খাব ওটা নিজেই, ঠিক করেছিলাম। কিন্তু পেলাম না তা এ টেবিলে। সামনে যেটা পেয়েছি সেটা হাতে নিয়ে প্যাকেট খুলতে যাচ্ছি যখন, তখন ঐ টেবিলে দীপ্র তার হাতের রুটিতে একটা কামড় বসিয়েই বলে উঠল এই “রুটি টার ভিতরে কি দিয়েছে? কেমন যেন লাগছে এটা ?“
পরিষ্কার হল যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দীপ্রর ভাগেই পড়েছে ওটা। অতএব আমার হাতের রুটিটির প্যাকেটের উপর কমলার ছবি দেখে সাথে সাথে উঠে গিয়ে সেটি দীপ্র কে দিয়ে, তার থেকে নিয়ে নিলাম মিষ্টি আলুর পুর দেয়া সেই বন রুটিটা। তবে ওটা খেতে গিয়ে বুঝলাম, নাহ নামছে না তা গলা দিয়ে। যথেষ্ট পরিমাণ মাখন, বা জেলি মাখা না থাকলে এই রুটি গুলো গিলতে যে অসুবিধা হয়, সে কারণেই দীপ্রর ঐটি খেতে অসুবিধা হচ্ছিল যেমন, তেমনি ওটার ভেতরে দেয়া মিষ্টি আলুর পুরের স্বাদটাও ওর ভাল লাগেনি। আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না মিষ্টি আলুর স্বাদটা , তবে ওটা গিলতে গিয়ে বেশ গিয়ে শুকনো লাগায়, শরণ নিলাম কুনমিং থেকে বয়ে আনা মর্তমান না শুধু , এক্কেবারে ভোমা সাইজের একটা সাগর কলার।
কলা সহযোগে সেই বনরুটি খেতে গিয়ে মনে হল , হায় কতদিন পরে খেলাম এই খাদ্য! অথচ এ ছিল কি না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমার প্রায় দিনের সকালের নাস্তা। পাহাড়ি চাঁপাকলা বা বাংলাকলা দিয়ে পাউরুটি বা বন রুটি খাওয়া ছিল সে সময় আমার মতো ফুটো পকেট নিয়ে ঘোরা ছাত্রদের নিত্য সকালের অতিশয় সস্তা নাস্তা । শুধু নাস্তাই কেন? পকেট ফাঁকা হয়ে গেলে অনেক দুপুরে তো ভাতের বদলেও চালিয়েছি এই মেন্যু । এছাড়া যে কোন ভ্রমণের যাত্রাপথে আব্বার এটিই ছিল একমাত্র মেন্যু । বহুদিন পর আবার কি না হাতে উঠলো সেই মেন্যু ! তাও কি না রাস্তার ধারের কোন টং ঘরে বসে নয় , বিদেশের মাটিতে এক্কেবারে পাঁচ তারকা হোটেলে বসে ?
ঠিক এসময়েই, বিছানার ডান পাশের পাশ টেবিলে থাকা টেলিফোনটি সুরেলা কণ্ঠে বেজে উঠতেই, কেউ কিছু বলে উঠার আগেই দীপ্র তড়িঘড়ি করে উঠে গেল ফোন ধরতে। অবশ্য ও কি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার জন্যই এভাবেই উঠে গেল? না কি নাস্তা খাওয়ার মতো ঝামেলার কাজটি থেকে আপাত রেহাই পাওয়ার জন্য করলো? তা জানি না। হতে পারে দুটোই। কারণ সকাল বেলায় নাস্তা হিসাবে যতই সুখাদ্যই দেয়া হোক, তা সহজে তার গলা দিয়ে নামে না। সে হিসাবে এখনকার নাস্তা তো আমাদের নিতান্তই সাদামাটা। আর তাতে তো তার অসুবিধা হবারই কথা।
ঐ ফোন বেজে উঠতেই বুঝে গিয়েছিলাম যে, বেইজিংভ্রমণের জন্য ঠিক করা আমাদের শকট নিশ্চয় এসে দাঁড়িয়েছে দুয়ারে; যার কারণেই কন্সিয়ার্জ থেকে এসেছে ফোন। ফলে হাতফোনের পর্দায় চোখ ফেলে বুঝতে চাইলাম বাজছে আসলে ক’টা এখন?
লেখক : প্রাবন্ধিক, সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুভ জন্মদিন প্রিয় ‘আজাদী’
পরবর্তী নিবন্ধরক্তাক্ত পঁচাত্তর : কমিশন অত:পর ট্রুথ কমিশন