কক্সবাজারেই হবে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

হাসান আকবর | সোমবার , ২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

পর্যটন শহর কক্সবাজারেই হচ্ছে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামে আরো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পর স্থান নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনাসমালোচনা, দাবি এবং পাল্টা দাবির মাঝে কক্সবাজারেই নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা জানিয়ে আজাদীকে বলেছেন, কক্সবাজারের এমন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে, যাতে বান্দরবান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকাগুলোও এর সুফল পেতে পারে। আনোয়ারা, পটিয়া বোয়ালখালী কিংবা সাতকানিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কক্সবাজারে একটিও নেই। তাই কক্সবাজারেই এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সম্প্রতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করার পরই স্থান নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রস্তাবিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। একজনের প্রস্তাবের ওপর অপরজনের ‘না’ নিয়ে শুরু হয় আলোচনাসমালোচনা। স্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে গিয়ে সরব হয়ে উঠেন অনেকে।

কেউ কেউ দাবি করেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক। যেখানে হাজার বছর আগে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় থাকার প্রমাণ উপস্থাপন করে তারা ওখানেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

এই দাবির বিরোধিতাকারীর সংখ্যাও কম নয়। তাদের মতে, চট্টগ্রামে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পর আবার শহর থেকে হাঁটা দূরত্বে নতুন করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি অযৌক্তিক। কেউ কেউ পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন স্থানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছেন।

কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। কক্সবাজারের লাগোয়া জেলা বান্দরবানেও কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই অনেকে পার্বত্যাঞ্চলের কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় বান্দরবানে প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানাতে থাকেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে এমন তৎপরতার মাঝে গতকাল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। নেই কক্সবাজার এবং বান্দরবানেও। তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বিস্তৃত এলাকার জন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সব দিক বিচার, বিশ্লেষণ করে প্রস্তাবিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের এমন একটি স্থান নির্ধারণ করা হবে, যাতে বান্দরবানসহ কাছের সবগুলো এলাকা উপকৃত হয়।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, সিভাসু, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ পর্যটন শহর কক্সবাজার এবং বান্দরবানে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় ওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বান্দরবানে লোকসংখ্যা খুবই কম এবং সেখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তাই বান্দরবানে আলাদা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আপাতত প্রয়োজন নেই। বান্দরবানের সাথে কক্সবাজারের দূরত্বও বেশি নয়। তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার পাশাপাশি বান্দরবান পার্বত্য জেলার মানুষও যাতে উপকৃত হতে পারে সেজন্য কক্সবাজারেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে।

কক্সবাজারের কোথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি উল্লেখ করে উপমন্ত্রী বলেন, আমরা সব দিক যাচাইবাছাই করে সবার জন্য কল্যাণকর একটি স্থান নির্ধারণ করব। এটি আবেগের ব্যাপার নয়।

তবে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সবার আগে একটি আইন জাতীয় সংসদে পাস করতে হবে। স্বতন্ত্র একটি আইন পাস না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। বিদ্যমান সংসদে আইনটি পাস করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। সংসদের মেয়াদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় আইনটি তৈরি করে সংসদে পাস করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টিকে সরকার গুরুত্বের সাথে দেখছে। এই উদ্যোগ সফল করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৃহবধূকে বালিশ চাপায় হত্যার অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধপচা গন্ধে দিনভর খুঁজেও মিলেনি হাসানের মুণ্ডু