এডিনয়েড গ্রন্থি কি? ও এর নানাবিধ সমস্যা

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

এডিনয়েড গ্রন্থি কি?

আমাদের নাকের পেছনে যে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে তা ঠিক গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতোই। এডিনয়েড বাহির থেকে দেখা যায় না। কারণ আমাদের মুখের তালুর উপর এডিনয়েড গ্রন্থিটি থাকে। কাজেই এটি খালি চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটি দেখতে হলেx-ray nasopharynx lateral view in open mouth. অথবা এন্ডোসকপির মাধ্যমে সেটি দেখা যেতে পারে। ৩ থেকে ৬ বছরের মধ্যে এটি আকারে সবচেয়ে বেশি বড় হয় এবং ৭ বছরের পর থেকে এটি ছোট হতে থাকে। ১১ বছরের পর অধিকাংশ সময় এটি খুব ছোট থাকে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এডিনয়েড গ্রন্থি ১১ বছরের পরও দেখা যেতে পারে। কারো যদি এই গ্রন্থি দীর্ঘসময় যাবৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বড় থাকে তবে তা নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হওয়ার কারণ

শিশুর ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণে নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। যার কারণে ঘন ঘন উর্ধ্বশ্বাসনালীর সংক্রমণ, সর্দি- কাশি, নাক বন্ধ, এলার্জিজনিত নাকের প্রদাহ, টনসিলের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, এজমা ও ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। উর্ধশ্বাসনালীর ইনফেকশন হলে তা এডিনয়েড এর উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে এডিনয়েড আকারে বড় হয়ে যায়। এছাড়া এলার্জিজনিত কারণেও এডিনয়েড বড় হয়ে যেতে পারে।
এডিনয়েড বড় হওয়ার উপসর্গসমূহ

নাকের পেছনে থাকা এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে বাতাস চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। নাক দিয়ে প্রায় সময় সর্দি ঝরতে থাকে। নাক থেকে পানি ঝরতে থাকে। শিশু নাকে নাকে কথা বলে। এ সমস্যা ছোটবেলা থেকে চলতে থাকলে ভুক্তভোগী শিশু নাকে নাকে কথা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ শিশুর ভাষা শিক্ষাটি এডিনয়েড বাধাগ্রস্ত করতে পারে। রাতে ঘুমের মাঝে শিশু প্রচন্ড নাক ডাকতে পারে। নাকের দু’পাশে সাইনাসও ইনফেকশন হতে পারে। এডিনয়েড এর কারণে ঘন ঘন গলার ইনফেকশন, খুশখুশে কাশি, গলার স্বর বসে যেতে পারে। একটি সরু নালীর মাধ্যমে মধ্যকর্ণের সাথে উর্ধশ্বাসনালীর সংযোগ রয়েছে। এই সরু নালীটিকে বলা হয় Eustachian tube এই টিউবের পাশেই থাকে এডিনয়েড। তাই এডিনয়েড বড় হলে টিউবের পথটি রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে মধ্যকর্ণে শ্লেষা জমে কানে ব্যথা হতে পারে এবং শিশু কানে কম শুনতে পারে। এমনকি বারবার মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণে শিশুর খাবার গ্রহণে বিলম্ব বা অসুবিধা হতে পারে। এছাড়া শিশুর মুখের একপাশ থেকে লালা ঝরতে পারে। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে শিশুর উপরের পাটির সামনের দাঁত উঁচু হয়ে যায়। বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পায়, লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়। পাশাপাশি আরো কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন : শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে। রাতে ঘুমের মাঝে বিছানায় প্রশ্রাব করতে পারে।
রোগ নির্ণয়

নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এ ধরনের শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে এবং অসুস্থতার ইতিহাস নিয়ে,, x-ray nasopharynx lateral view in open mouth. এবং নাকের এন্ডোসকপির মাধ্যমেই এডিনয়েড গ্রন্থি বৃদ্ধির বিষয়টা বুঝা যায়। এডিনয়েড এরে প্রভাবে যেহেতু শিশু কানে কম শুনে, সে জন্যে শ্রবণ শক্তি নির্ণয়ের জন্য PTA with impedance with SRT এই পরীক্ষাটি করা যেতে পারে।
চিকিৎসা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এডিনয়েড এককভাবে বড় হয় না। এর সাথে টনসিল ও বড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টনসিলের প্রদাহ হলে এন্টিবায়োটিক দিয়ে এই প্রদাহ কমানো যেতে পারে। কিন্তু এডিনয়েড এর সমস্যার মূল চিকিৎসা অপারেশন। অনেক সময় টনসিল অতিমাত্রায় বড় হলে অথবা টনসিল ইনফেকশন থাকলে এডিনয়েড এর সাথে টনসিলও অপারেশনের মাধ্যমে অধিকাংশ সার্জন ফেলে দেয়। মেডিকেল সায়েন্সে অপারেশনটিকে বলা হয় adenotonsillectomy । এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো : যেহেতু এডিনয়েড এর প্রভাবে বাচ্চা কানে কম শুনে সেহেতু কানের পর্দায় একটি ছিদ্র করার মাধ্যমে মধ্যকর্ণে অবস্থিত তরল পদার্থ বের করতে যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তার নাম myringotomy । এর সাথে Gromette বা Ventilation স্থাপন করা হয় ভেতরের তরল পদার্থ বের হয়ে আসার জন্য। যা ৬ থেকে ৯ মাস পর অনায়াসে expelled out হয়ে যায়।
কখন এডিনয়েড এর অপারেশনের প্রয়োজন হয়?

এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার জন্যে যদি নাক প্রায়শ বন্ধ থাকে, নাক দিয়ে প্রায় সর্দি ঝরে, সব সময় নাকে নাকে কথা বলে, শিশু প্রায় সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে যদি মধ্যকর্ণে বার বার ইনফেকশন হয়। ঘুমের মধ্যে যদি শিশু মাঝে মাঝে দম বন্ধ অবস্থা হয়- যাকে বলা হয় sleep apnoea দীর্ঘদিন ধরে এডিনয়েড এর বৃদ্ধিজনিত কারণে শিশুর নাক বন্ধ থাকার জন্যে শিশুর মস্তিষ্কে অঙিজেন সরবরাহ কম হয়। ফলে শিশুর মস্তিষ্কে স্বাভাবিক বিকাশ এবং বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হয়। শিশু ক্রমাগতভাবে কানে কম শুনার কারণে ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। লেখাপড়ায় খারাপ করে এবং শিক্ষা জীবন ব্যাহত হয়। তাই শিশুদের এরকম কোনো সমস্যা থাকলে তাকে দ্রুত ঠান্ডা বা এলার্জি জনিত সমস্যা মনে করে বসে না থাকে একজন নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যোগাযোগ করুন।

লেখক : সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি)
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারিগর
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে