কারিগর

পান্না আহমেদ | শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কিছু তৈরি করা! একটা সৃজনশীল কাজের সাথে সম্পৃক্ততা, এর চেয়ে মৌলিক কাজ পৃথিবীতে নেই। একটু একটু করে সুতোর বুননে নকশীকাঁথা, একটু একটু করে হৃদয়ের বুননে পরিবার, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালোবাসার প্রচেষ্টায় জগৎসংসার তৈরি হয়! এর চেয়ে মহৎ সৃজনশীলতা আর নেই।
আমি অবাক হয়ে দেখি সব সৃজনশীল মানুষদের! পড়ি মহতী সব মনীষীদের জীবনী। ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল সব মহামানব! খুব ইচ্ছে করে জীবন তরী ভাসিয়ে দেই সেই মহতী ত্যাগের পথে! জীবনের প্রয়োজনে কাজ! এই কাজ সবসময় প্রিয় হয় না। আমার কাজ একটা চমৎকার মহতী প্রয়াস! শিক্ষকতা! মহান পেশা! আজকাল সব কিছুই প্রশ্ন বিদ্ধ! এই বিষয়ে আলোচনায় যাবো না! কিন্তু আমি মানুষ গড়ার কারিগরের মতো মহান কাজে ব্রতী হতে পেরে গর্বিত! ক্ষুদ্র এ জীবনে আজ আমার অনেক স্টুডেন্ট আমার কলিগ! কি যে ভালো লাগে তাদের দেখে। গর্বে মন ভরে ওঠে! যেখানেই যাই কেউ না কেউ এসে দাঁড়িয়ে যায় মিষ্টি হেসে আর বলে মিস আমি অমুক ব্যাচের! আনন্দে আমার কান্না পায়! সব চেয়ে অপছন্দের দুষ্ট বাচ্চাটিও অনেক মমতার জায়গা দখল করে আছে আমার হৃদয়ে, তা আবিষ্কার করে খুশিতে মন ভরে উঠে! আরো কত কত জায়গায় আমার বাচ্চারা প্রতিষ্ঠিত ভাবতে অবাক লাগে! মনে হয় এইতো সেদিন স্কুলে জয়েন করেছি, একজন গার্ডিয়ান আমাকে দেখে বলেছিল আপনি পান্না মিস? এতো ছোট একজন মানুষকে বাচ্চারা এত ভয় পায়? ধীরে ধীরে অনেক পথ পার করে দিলাম। আমার স্টুডেন্টরা আজ অনেক বড় বড় পোস্টে কাজ করছে! একজন আমার কলিগ আর একজনতো আমার বস! হাহাহা! আমি ক্ষুদ্র একজন কারিগর! সামান্য আমার ক্ষমতা। একটা বাচ্চাকেও যদি সুন্দর জীবনের কথা শেখাতে পারি আমার জীবন সার্থক! মৃত্যু আমাকে ভাবায় না! ঘৃণা আমাকে ভাবায়! আমার বাচ্চারা যদি ভালোবাসা শেখে দেশকে ভালোবাসা মাকে ভালোবাসা, শিক্ষক বন্ধু বান্ধব সমাজ পরিবারের সবাইকে ভালোবাসতে শেখে এটাই আমার পরম ভাগ্য, তখন মনে হবে আমি সত্যি একজন কারিগর! ক্ষুদ্র তা জানি তাও এটাই আমার গর্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বব্যাপী অস্থিরতা : শান্তি আর স্বস্তির খোঁজে মানুষ!
পরবর্তী নিবন্ধএডিনয়েড গ্রন্থি কি? ও এর নানাবিধ সমস্যা