চট্টগ্রাম কাস্টমসে ১৬ কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ৫ কোটি টাকার ল্যান্ডক্রুইজার গাড়িসহ ৪৫ লট পণ্যের অনলাইন নিলাম (ই–অকশন) আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। গত মঙ্গলবার থেকে বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারীরা) কাস্টমসের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দরপত্র দাখিল করতে পারছেন। দরপত্র দাখিল করা যাবে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এছাড়া নিলামে আগ্রহীরা চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডে গতকালের মতো আজকেও স্বশরীরে পণ্য পরিদর্শন করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ৪৫ লট পণ্যের মধ্যে রয়েছে– বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিঙ, লেডিস সু সোল, সিরামিকের ফুলদানি, ক্র্যাফ্ট কার্টন, পিভিসি শিট, গার্মেন্টস এঙেসরিজ, সোডিয়াম সালফেট, ব্যবহৃত কম্বল, বই, কম্বলের কাপড়, হুইট ব্রান ক্রপ, মাল্টি গ্রেড ইঞ্জিন অয়েল, পাইনাপল জুস, ম্যাঙ্গু ন্যাক্টার, আপেল জুস, স্ট্রবেরি অ্যান্ড ব্যানানা জুস, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ল্যান্ডক্রুইজার গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে ২০২২ সালের তৈরি ব্র্যান্ড নিউ মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের দাম ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৬ টাকা এবং ২০২১ সালের তৈরি ল্যান্ডক্রুইজারের দাম ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৩৪০ টাকা।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ১৬ লট বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিলামে তোলার মাধ্যমে ই–অকশনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৯ ও ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ২০ লট পেঁয়াজ নিলামে তোলা হয়। এছাড়া একই বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল ১১২ লট গাড়ি তোলা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১২ ও ১৩ জুন কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা ১০৮টি গাড়ি পুনরায় নিলামে তুলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৭৮ লট কার্নেট গাড়ি নিলামে তোলা হয়। এছাড়া গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধরণের ২৩ লট পণ্য এবং গত ৩১ ডিসেম্বর ১০৮ লট পণ্য ই–অকশনে তোলা হয়। এছাড়া চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ধরণের ৭৯ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়। তবে সেই নিলামে ৩৫ লটের একটি দরপত্রও জমা পড়েনি! পরবর্তীতে গত ১৬ মে ফেব্রিঙসহ ৯০ লট পণ্যের নিলামে দরপত্র জমা পড়েছে ১৭০টি। নিলামে ৪৯ জন বিডার অংশ নেন। এছাড়া সর্বশেষ গত ২৬ জুন গাড়ি–ফেব্রিঙসহ ৬৩ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়। নিলামে ৩৬টি দরপত্র জমা পড়ে। এরমধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই শেষে ২৬ লটে বিক্রয় অনুমোদন দেয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার সেলিম রেজা জানান, বন্দরের ইয়ার্ড খালি করার জন্য আমরা নিয়মিত নিলাম কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে এখন আর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আমরা নিলাম করছি না। সব অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই আলোকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দুটি গাড়িসহ ৪৫ লট পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছ।
এদিকে কয়েকজন বিডার বলেন, অনলাইন নিলামে এখনো শুধুমাত্র দরপত্র দাখিল হচ্ছে অনলাইনে। বাকি সব কাজ হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। অনেক বিডার অনলাইনে অভ্যস্ত হতে পারেননি। তাই চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও নিলামে ব্যবস্থা রাখে, তবে নিলামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরো বাড়বে। অনলাইনে নিত্যনতুন ভোগান্তিতে পড়ছেন বিডাররা। বিক্রয় অনুমোদন দেয়া হচ্ছে ৩ মাস পর। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এত দেরি কখনো হতো না।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।