বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া উপকূলে দুটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৩৫ জেলে উদ্ধার হলেও এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ও বৃহস্পতিবার রাতে কুতুবদিয়া উপকূলের নিকটবর্তী সাগরের গুলীদ্ধার নামক স্থানে ঘটনা দুটি ঘটে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা সংকেত জারি করে। ফলে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরছিল ট্রলারগুলো। এ সময় তীব্র ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলার দুটিসহ আরো কয়েকটি ট্রলার ডুবে যায় বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।
তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নাজিরারটেক উপকূলের কাছে ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায় খুরুশকুলের জাকির হোসেনের মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া। এ সময় ট্রলারে থাকা ১৭ মাঝিমাল্লা সাগরে ঝাঁপ দেয়। তাদের মধ্যে ৮ জন সাঁতার কেটে কূলে আসে এবং ৮ জনকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। বাকি এক জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তার নাম জানা যায়নি। তিনি আরো জানান, এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের গুলীদ্ধার নামক স্থানে ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায় কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের অলী পাড়ার কলিম উল্লাহর মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দান। এই ফিশিং ট্রলারে ১৯ জেলে ছিলো। পরে আরেকটি ফিশিং ট্রলার জেলেদের উদ্ধার করে ঘাটে নিয়ে আসে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলে দমকা হাওয়া বইছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরা নৌকাসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ট্রলার মালিকরা জানান, লঘুচাপের কারণে গত ৬ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত একইভাবে সাগরে মাছধরা বন্ধ ছিল। আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করায় গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে ট্রলারগুলো ফের মাছ ধরতে সাগরে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র দুদিন পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়া দপ্তর ফের ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করে। ফলে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরছিল ট্রলারগুলো।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৭ হাজার মাছধরার বোট রয়েছে। এর মধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এসব জেলে বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।