চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ছোট্ট গ্রাম ধর্মপুর থেকে শুরু হয়েছিল ইরফান উদ্দীনের যাত্রা। গ্রামের স্কুলে এসএসসি আর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি—দুটোতেই ছিল জিপিএ ৫.০০। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। স্নাতক শেষ করেন ২০১৬ সালে, তবে সিজিপিএ ছিল মাত্র ২.৯৮। দেশে থাকতে চাকরি খুঁজে কিছুদিন বেকার ছিলেন, পরে ওয়ালটনে চাকরি পেয়ে হাতে কলমে কাজ শিখতে থাকেন।
দেশেই ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও ইরফানের ভেতরের স্বপ্নটা ছিল বড়—সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কম সিজিপিএ আর কোনো গবেষণাপত্র না থাকা। তাই বিকল্প পথ বেছে নেন, গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন (জিআরই) ভালোভাবে দেন এবং ৩৩১ স্কোর তোলেন। এই স্কোরই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইয়োমিংয়ে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপে মাস্টার্সে পৌঁছে দেয় ২০২৩ সালের আগস্টে।
মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে ঢুকে যায় চাকরি খোঁজার বাস্তবতা। জানুয়ারি থেকে একের পর এক আবেদন, কিন্তু সাড়া মিলছিল না। ক্লাস, পরীক্ষা আর গবেষণার ভিড়ে প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতেন চাকরির জন্য। এক পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি থেকে ইন্টারভিউ কল আসা শুরু হয়। তবুও প্রথম চাকরির অফার পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে মে মাস পর্যন্ত। এক হাজারেরও বেশি আবেদন জমা দিয়ে অবশেষে সেরা সুযোগটি পান—সিলিকন ভ্যালির এআই প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি।
এই চাকরি পেতে তাঁকে ৯ ধাপের ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে, যার মধ্যে একদিনে টানা ৭টি ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। অনসাইট ইন্টারভিউয়ের জন্য ওয়াইয়োমিং থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যেতে হয়েছে তাঁকে। এই দীর্ঘ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বুঝে গেছেন, বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা বা দক্ষতাও বিদেশে চাকরি পেতে বড় সহায়ক হতে পারে।
সবশেষে অ্যাস্টেরা ল্যাবসের চূড়ান্ত অফার—বার্ষিক সাড়ে তিন কোটি টাকা বেতন, সঙ্গে প্রথম বেতনের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার সাইনিং বোনাস, শেয়ার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। জীবনের শুরুতে গ্রামের স্কুল থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা অবশেষে তাঁকে নিয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি জোন সিলিকন ভ্যালিতে।