এশিয়া ও আমেরিকায় অন্তত ২৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এমন জায়গায় বসবাস করছেন, যেখানে জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে আগামী ২৫ বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্বিগুণ হতে পারে–এমনই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। মৃদু ডেঙ্গু উপসর্গহীন হতে পারে। আবার দেখা দিতে পারে জ্বর ও ফ্লুর মতো লক্ষণও। অন্যদিকে গুরুতর ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে রক্তপাত ও নিম্ন রক্তচাপের মতো লক্ষণ, যেখানে হঠাৎ রক্তচাপের কমে যাওয়া হতে পারে কারো মৃত্যুর কারণ।
এসব লক্ষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও ভাইরাল ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনও চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নেই। তবে এ সমস্যা কমিয়ে আনতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার খবর দিয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস। গত সপ্তাহে গবেষণাটি উপস্থাপিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিন্স শহরে আয়োজিত আমেরিকান সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের বার্ষিক সভায়। খবর বিডিনিউজের।
গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ১৯ শতাংশ ডেঙ্গু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে। ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি সংশ্লিষ্ট গবেষকদের অনুমান বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ গড়ে বাড়বে ৬১ শতাংশ। কয়েকটি শীতপ্রধান অঞ্চলে এ প্রকোপ বাড়বে দ্বিগুণেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এরিন মরডেকাই বলেছেন, এশিয়া ও আমেরিকার ২১টি দেশের ডেঙ্গুর প্রকোপ ও জলবায়ুর ওঠানামার নানা তথ্য তারা খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখানে ক্রমাগত তাপমাত্রা ও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট ও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণের হারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অন্যান্য কারণ, যেমন বৃষ্টিপাতের ধরন, ঋতু পরিবর্তন, ভাইরাসের ধরন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে নজর দিয়েছেন গবেষণা দলটি। এতে নিশ্চিত করা গেছে, ডেঙ্গু প্রকোপে তাপমাত্রার স্বতন্ত্র প্রভাব থাকার বিষয়টিও। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ডেঙ্গুর মতো রোগের জন্য। আমাদের গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, আরও খারাপ হতে পারে এই প্রভাব, বলেছেন মরডেকাই।
২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শুধু আমেরিকার বিভিন্ন দেশেই প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ৪৬ লাখের মতো। এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস নামের মশা সাধারণত ডেঙ্গু ছড়ায়। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশাল সংখ্যক ডেঙ্গু ভাইরাস তৈরি করতে পারে এসব মশা।
এর মানে হচ্ছে, ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে পেরু, মেক্সিকো, বলিভিয়া ও ব্রাজিলের কিছু অংশের ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা। আগামী কয়েক দশকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে দেড়শ থেকে দুইশ শতাংশ পর্যন্ত। বৈশ্বিক জলবায়ুর বিভিন্ন মডেলে উঠে এসেছে, কার্বন নির্গমন কমে এলেও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।
গবেষকরা বলছেন, কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী পরিস্থিতিতে আছে এমন ২১টি দেশের মধ্যে ১৭টি দেশ এখনও জলবায়ুর কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।