দুই দশকের বেশি সময় আগে স্থানীয় এক ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়েছিল মেহেরপুরের গাংনীর এক নারীর। দীর্ঘকাল অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করার পর গত রোববার তিনি জেনেছেন, পেটে কাঁচি রেখেই তার চিকিৎসা ‘শেষ’ করেছিলেন চিকিৎসকরা। বাচেনা খাতুন নামের ওই নারীর বয়স এখন ৪৭ বছর। তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামে। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমিও বেচে দিয়েছিলেন স্বামী আব্দুল হামিদ। সেই অস্ত্রোপচারে স্বস্তির বদলে মিলেছে দীর্ঘ অসহনীয় যন্ত্রণা আর আর্থিক অনটন। খবর বিডিনিউজের।
হামিদ বলেন, ২২ বছর আগে স্ত্রীর পেটে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণে তাকে গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিকে নিয়ে যান তিনি। চিকিৎসক জানান, বাচেনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে, দ্রুত অপারেশন করতে হবে।
এরপর ওষুধপত্র ও অপারেশন বাবদ ২০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল রাজা ক্লিনিকের মালিক পারভিয়াস হোসেন রাজার সাথে। বাচেনাকে ‘বাঁচানোর’ জন্য শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে দেন কৃষি শ্রমিক আব্দুল হামিদ।
বাচেনা খাতুন বলেন, রাজা ক্লিনিকে চিকিৎসক মিজানুর রহমান তার পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করেন। অ্যানেস্থেশিয়া দিয়েছিলেন চিকিৎসক তাপস কুমার। অপারেশনের পরে চিকিৎসক বলেছিল, পিত্তথলির পাথর ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর জ্বালা-যন্ত্রণা হবে না। কিন্তু পেট ভারী ভারী লাগত। জ্বালা যন্ত্রণা কমে যাওয়ার বদলে আরও বাড়তে থাকে। পেটের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে বছরের পর বছর বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছুটেও লাভ হয়নি। এরই মধ্যে স্বামী ও বাবার টাকা-পয়সা যা ছিল, তাও খোয়াতে হয়েছে। পেটের ব্যথা তো সারেইনি, কিছু খেলে বমি আসত। পানি খেলে পেটের মধ্যে কিছু নড়ছে বলে মনে হত বাচেনার। শেষমেষ স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের শরণাপন্ন হন ওই দম্পতি। সেখানে এক্স-রে করার পর বাচেনার পেটে আস্ত একটি কাঁচির সন্ধান মেলে। এখন ওই কাঁচি বের করতে অপারেশন করার মত আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি বাচেনার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এখন আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। অপারেশনের সময় চিকিৎসক মিজানুর রহমান ও তাপস কুমারের সাথে আমিও ছিলাম। মানুষ মাত্রই ভুল হয়, এটাও ভুল।