হারিয়ে গেছে পুতুল

জোবায়ের রাজু | বুধবার , ২ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আদিলা এবারের জন্মদিনে অনেকগুলো গিফট পেয়েছে। বড় মামী আদিলাকে যে পুতুলটি দিয়েছে, সেটা ভীষণ প্রিয় আদিলার। সারাদিন পুতুলটি নিয়ে খেলতে কোনো অনীহা নেই। আদিলার বাবা মিজান সাহেব মেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে মুখটিপে হাসেন। পুতুলটাকে রোজ দুপুরে গোসল করানোটা আদিলার এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পুতুলের চুলে শ্যাম্পু করতে খুব আনন্দ হয় আদিলার।
কিন্তু একদিন ঘটলো এক বিপত্তি। আদিলা তার শখের পুতুলটিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। সারাবাড়ির তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পুতুলের হদিস নেই। পুতুল হারিয়ে আদিলা কান্নাকাটি শুরু করে দিল। মিজান সাহেব মেয়েকে কোলে নিয়েও কান্না থামাতে পারেননি। কোথায় যে হারিয়ে গেল পুতুলটি।
আদিলার কান্না থামছে না দেখে মিজান সাহেব একটি বুদ্ধি বের করলেন। নিজে ছোট্ট একটি চিঠি লিখে এনে আদিলাকে বললেন, ‘পুতুলের জন্য আর চিন্তা করতে হবে ন। সে ভালো আছে। তোমাকে চিঠি লিখেছে পুতুল।’ বাবার কথা শুনে চোখ চকচক করে উঠল আদিলার। উচ্ছ্বাস কন্ঠে বলল, ‘সত্যি? পড়ে শোনাও তো পুতুল চিঠিতে কি লিখেছে?’ তারপর মিজান সাহেব আদিলার সামনে বসে নিজের লেখা চিঠি পড়তে লাগলেন- ‘আদিলা, তোমাকে না বলে আমি মামার বাড়িতে চলে এসেছি বলে রাগ করো না। আমি আগামী শুক্রবার বিকেলে ফিরে আসব। আমার জন্য কোনো চিন্তা করবে না। নিয়মিত খাওয়ার খাবে। বাবা-মায়ের কথা শুনবে। ঠিক আছে? তুমি তো খুব লক্ষ্মী মেয়ে, আশা করি আমার কথাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবে।’
বাবার পড়ে পড়ে শোনানো চিঠিটা শুনে স্বস্তি পেল আদিলা। কৌতুহলী কণ্ঠে বাবাকে বলল, ‘পুতুলের মামার বাড়ি কোথায় বাবা? তুমি চেনো? আমাকে নিয়ে যাবে?’ মিজান সাহেব বললেন, ‘অনেক দূর। চিনবে না তুমি। আমিও চিনি না।’
তারপর থেকে শুরু হল আদিলার অপেক্ষার পালা। তার হারানো পুতুল আগামী শুক্রবারে ফিরবে মামার বাড়ি থেকে। এটা ভাবতে আদিলার ভালো লাগছে। মনে মনে ঠিক করেছে পুতুল ফিরে এলে তাকে আচ্ছামত বকা দেবে। কেন সে বলে যায়নি আদিলের কাছে!
২.
আজ বুধবার। গতরাতে মিজান সাহেব অফিস থেকে ফেরার সময় মার্কেট থেকে একটি পুতুল কিনে বাসায় ফিরলেন। বাসায় এসে পুতুলটাকে লুকিয়ে রাখলেন আলমারিতে।
আদিলা ঘুম থেকে উঠে তার সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। আজ বিকেলে পুতুল আসবে, এটা ভাবতে কি যে ভালো লাগছে। ভোরের বারান্দায় এসে আদিলা দেখতে পায় এই হেমন্তে তাদের শিউলি তলায় ঝরা শিউলি ফুল পড়ে আছে। আদিলা বেশ কিছু শিউলি ফুল কুড়িয়ে এনে ছোট্ট একটি মালা গাঁথলো তার পুতুলটাকে দেবে বলে।
বিকেলে বাবার ডাকে ঘুম ভাঙলো আদিলার। মিজান সাহেব উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, ‘ড্রয়িংরুমের সোফায় কে বসে আছো দেখে এসো।’
আদিলা ড্রয়িংরুমে আসে। দেখতে পায় একটি পুতুল সোফায় বসা। কিন্তু পুতুলটি তার হারিয়ে যাওয়া সেই পুতুল নয়৷ এটি নতুন পুতুল এবং দেখতেও বেশ মোটা।
– এটা তো আমার পুতুল নয় বাবা।
– না মা। এটা তোমার পুতুল।
– কিন্তু আমার পুতুলটা তো এরকম ছিল না। এত মোটাও ছিল না।
– তুমি খুব বোকা। ও এতদিন মামার বাড়ি ছিল। মামীরা ওকে ভালো ভালো খাবার খাইয়ে এত মোটা করে ফেলেছে৷ এই সাধারণ ব্যাপারটি তুমি বোঝো না কেন?
আদিলা চুপ হয়ে পুতুলটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর সোফা থেকে পুতুলটাকে তুলে এনে কোলে নিয়ে চুমু খায় আর বলে, ‘আমাকে না বলে আর কোথাও যাবে না কিন্তু। জানো, তোমার জন্য আমি শিউলি ফুলের মালা গেঁথেছি! তুমি জানো না তোমাকে আমি কত্ত ভালোবাসি।’
মেয়ের কান্ড কারখানা দেখে মিজান সাহেব মুখ টিপে হাসছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবুজ নিমন্ত্রণ
পরবর্তী নিবন্ধভূতপল্লি লাল দ্বীপ