ভূতপল্লি লাল দ্বীপ

রেজাউল করিম | বুধবার , ২ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ভূত আসলে কি-এর সদুত্তর এখনো মেলে নি। অথচ বাংলাসাহিত্যে ভূত নিয়ে কতো ছড়া-কবিতা-গল্প আছে তার হিসেব নেই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগেও ভূত নিয়ে রচিত হচ্ছে ছড়া-কাব্য। ‘ভূত থাকে মনে মনে/ ভূত থাকে আঁধারে/ রাত্রিতে ভূত / বনে আর বাদাড়ে/ পৃথিবীতে আছে ভূত/ গুণীজন কয় যে/ ভূত নিয়ে সব্বার/ মনে তাই ভয়/ ভূত হয় লম্বাটে/ ভূত রং কালো/ ভূত নাকি ভয় পায়/ দিনের ওই আলো।’ কিন্ত এই ভূতদেরও আছে গ্রাম, আছে নাকি পরিবার-পরিজন। সম্প্রতি একটি ভূতদের গ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
আমিরাতের সমুদ্রের কাছে একটি দ্বীপ, অর্ধ্ব-শতাব্দী ধরে দীর্ঘ প্রায় জনমানব শূন্য, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি স্থানীয়দের কাছে ভূতপল্লি, ভূতের গ্রাম বা জ্বীনদের বসবাসের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। দেশটির রাস আল খাইমাহ প্রদেশে অবস্থিত এই দ্বীপটির নাম আল জাজিরা আল হামরা। বাংলায় ‘লাল দ্বীপ’। এখানকার বহু বছরের পুরোনো ঘরবাড়ি আর ধ্বংসস্তূপগুলোতে মিশে আছে রহস্যময় নানা ঘটনা আর গল্প।
লাল দ্বীপের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস হচ্ছে, জ্বীন-ভূতের ভয়ে লাল দ্বীপকে ১৯৬৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্বীপের বাসিন্দারা সবাই আবুধাবি পাড়ি দিয়েছেন।
১৮৩০ সালের দিকে এই দ্বীপের অন্তত দুইশত লোক মুক্তা সংগ্রহ করত। ব্যবসায়িক সূত্রে এখানে পার্শিয়ান, পর্তুগিজ ও ব্রিটিশদের চলাচল ছিল। প্রথমে ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে স্থানীয় শাসকরা এর নাম রাখে ‘জোরাত আল কামর’। পরে জাআব গোত্রের লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ে। তারা অন্তত ৫০০ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। তাদের ২৫টি মুক্তা সংগ্রহের নৌকা ছিল। তখন থেকে তারা গ্রামটিকে ‘জাজিরা আল জাআব’ নামে প্রচার শুরু করে। ১৯১৪ সালে দেশটির প্রাদেশিক শহর শারজাহর শাসক শেখ খালিদ বিন আহমদ আল কাসিমি ও রাস আল খাইমাহর শাসক শেখ সুলতান বিন সেলিম আল কাসেমির মধ্যে একটি চুক্তির পরে এলাকাটি রাস আল খাইমাহর অংশে পরিণত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে এই গ্রামে জ্বীন-ভূতের বসবাসের খবর রটে যায়। বাসিন্দাদের মনে ভয়-ভীতি তৈরি হয়। এক কিলোমিটারেরও কম আয়তনের ভৌতিক গ্রামটি বর্তমানে কাঁটাতারের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভাঙা ভবনগুলোর পথ ধরে ভেতরে যেতে গা ছমছম করে ওঠে। বড় বড় সামুদ্রিক পাথরে নির্মিত শত শত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মানুষজন নেই বললেই চলে। চলাচলের রাস্তাগুলো জঞ্জালে ভরা। স্থানীয়দের মধ্যে লাল দ্বীপে জ্বীন-ভূত থাকার প্রচার-প্রচারণা রয়েছে। পরিত্যক্ত গ্রামের ঘরবাড়িগুলো বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
এর আগে গ্রামটি নিয়ে ভৌতিক চলচ্চিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেন কয়েকজন নির্মাতা। নির্মাতা ফয়সাল হাশমির বলেন, এই গ্রামে যারা ছিলেন কিংবা ভ্রমণে এসেছেন তাদের সঙ্গে একবার হলেও রহস্যময় ভূতুড়ে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছে। অনেকে এই গ্রামে জ্বীন নেই বলছে, আবার অনেকে অস্তিত্ব আছে বলে মনে করেন।
শেওড়াগাছের পেত্নী আর/ তেঁতুল গাছের ভূত/ তাদের মধ্যে রিলেশনটা/ ভীষণ ই মজবুত/ রোজ রাত্রে করতো দেখা/ শিমুল গাছের ডালে/ ফিরে ফিরে চাইতো দুজন/
চলে যাবার কালে’। জ্বীন-ভূত- পেত্নী আছে কি নেই সেটা বিবেচ্য নয়-সাহিত্যের অনেকটা জুড়ে রয়েছে এরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহারিয়ে গেছে পুতুল
পরবর্তী নিবন্ধপশ্চিম গোমদন্ডী ফুলতল অটোরিক্সা চালক সমিতির মিলাদ মাহফিল