স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির মধ্যেই কাল থেকে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন শুরু

চট্টগ্রামে ২০ লাখ শিশুকে টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল (১২ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনে মহানগর ও ১৪ উপজেলাসহ চট্টগ্রাম জেলায় এবার প্রায় ২০ লাখ শিশুকে এই হাম-রুবেলা টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে মহানগরে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন আর জেলার ১৪ উপজেলায় ১২ লাখ ৭ হাজার ১৪৮ জন শিশুকে এই টিকা খাওয়ানো হবে। ৬ সপ্তাহব্যাপী এ ক্যাম্পেইন চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির মধ্যেই এ ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী। স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের মাধ্যমে এ টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে স্বাস্থ্য সহকারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এবার বিকল্প উপায়ে এ কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য সহকারীদের বিকল্প হিসেবে কমিউিনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচপি) ও পরিবার-পরিকল্পনার স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে এ ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নিয়োগ বিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেশ কিছুদিন ধরে কর্মবিরতিও পালন করে আসছেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা এখনো কাজে যোগ দেননি। স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে প্রথমে মহানগর এলাকায় এ ক্যাম্পেইন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সিভিল সার্জন বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চসিকের স্টাফ দিয়ে এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়ে থাকে। যার কারণে এখানে স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রয়োজন নেই। তাই প্রথম দিকে সিটি কর্পোরেশন এলাকাতেই এ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হবে। ৬ সপ্তাহব্যাপী যেহেতু ক্যাম্পেইন চলবে, সেহেতু পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যাবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলার ১৪ উপজেলায় ১২ লাখ ৭ হাজার ১৪৮ জন শিশুকে এবার হাম-রুবেলা টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫-১০ বছর বয়সী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৩ জন এবং ৯ মাসের ঊর্ধ্বে ও ৫ বছরের কম বয়সী ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৫ জন শিশুকে এই টিকা খাওয়ানো হবে। ১৪ উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নে ও ৬০০টি ওয়ার্ডে স্থায়ী-অস্থায়ী ৪ হাজার ৮৪৩টি কেন্দ্রে এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান, মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় এবার ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন শিশুকে হাম-রুবেলা টিকা খাওয়ানো হবে। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ৫-১০ বছর বয়সী ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ৯ মাস থেকে ৫ বছরের কম বয়সী ৩ লাখ ১ হাজার ২৬ জন শিশুকে এক ডোজ করে টিকা দেওয়া হবে। ক্যাম্পেইন চলাকালে চসিক জেনারেল হাসপাতালে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নম্বর ০৩১-৬৩৪৫৮৪, ০৩১-৬১৬৫৫৫) খোলা থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- নির্দিষ্ট বয়সের কোনো শিশু আগে হাম-রুবেলা টিকা পেলেও ক্যাম্পেইন চলাকালে ১ ডোজ টিকা অতিরিক্ত হিসেবে নিতে হবে। টিকাদান কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা ও মুখে মাস্ক রাখতে হবে।
হাম সাধারণত আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যদের মধ্যে হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। শিশু ছাড়াও যেকোনো বয়সে হাম হতে পারে। রুবেলা রোগের জীবাণু প্রধানত বাতাসের সাহায্যে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে সুস্থ শরীরে প্রবেশ করে এবং লক্ষণ দেখা দেয়।
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভের ৩ মাসের সময় রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মা থেকে গর্ভের শিশু আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভপাত এমনকি গর্ভের শিশুর মৃত্যুও হতে পারে অথবা শিশু জন্মগত বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম (সিআরএস) নামে পরিচিত। ফলে শিশুদের হাম-রুবেলা টিকা দেয়াটা খুবই জরুরি বলে বলছেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিজয়ের মাসে আরেক অনন্য অর্জন
পরবর্তী নিবন্ধডবলমুরিংয়ে তরুণীর আত্মহত্যা নিয়ে রহস্য