স্ট্রোক শনাক্তের অ্যাপ

| শনিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো শনাক্তে সক্ষম এমন একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন গবেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ নির্ণয়ে নয়, বরং শিক্ষামূলক টুল হিসাবে এটি ব্যবহার করা উচিত। ‘ফাস্ট এআই’ নামের ওই অ্যাপ্লিকেশন হৃদযন্ত্রের অনিয়ম এবং কাশির আওয়াজ শুনে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। নির্মাতাদের দাবি, অদূর ভবিষ্যতে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ শনাক্তে সহায়তার সক্ষমতা অর্জন করবে। স্ট্রোক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষকে স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে ও প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ে জরুরি চিকিৎসা নিতে সহায়তা করাই এই প্রযুক্তির প্রয়োগ হওয়া উচিত। এই অ্যাপ থেকে স্ট্রোক হয়েছে বা হয়নি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। গবেষকরা মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ মুখের আকার বেঁকে যাওয়া, বাহু দুর্বলতা এবং কথা বলার ধরন বদলে যাওয়ার তথ্যনির্ভর এই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করেছেন। আগামী সপ্তাহে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্সে এর প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। খবর বিডিনিউজের।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট লস অ্যাঞ্জেলেসের ভাস্কিউলার নিউরোলজিস্ট ও গবেষণার প্রধান লেখক রাদোস্লাভ আই রায়চেভ বলেন, আমাদের লক্ষ্য খুবই সহজ। আমরা শুরুতেই স্ট্রোক শনাক্ত করতে চাই।

অ্যাপ্লিকেশনটি এখনও জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। এটি কখন সবার জন্য পাওয়া যাবে বা কীভাবে এর বিপণন হবে তাও স্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য অ্যাপ ছাড়িয়ে একে অন্যান্য ডিভাইস বা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যখন কেউ ভিডিও চ্যাটিংয়ে থাকেন, অ্যালেঙার মতো ভার্চুয়াল সহকারীর সঙ্গে কথা বলেন বা স্বচালিত গাড়ি চালান, তখন আমরা স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন রোগীর লক্ষণ শনাক্ত করতে পারি সেজন্য প্যাসিভ নজরদারির সক্ষমতা অর্জন করতে চাই।

বুলগেরিয়ার চারটি প্রধান মেট্রোপলিটন স্ট্রোক সেন্টারের নিউরোলজিস্টরা ২৭০ জন রোগীর ওপর অ্যাপটি পরীক্ষা করেন যাদের তীব্র স্ট্রোক নির্ণয় করা ছিল। ভিডিও রেকর্ডিং এবং ডিভাইস সেন্সর ব্যবহার করে অ্যাপটি ৯৭ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে বেঁকে যাওয়া মুখ ৭২ শতাংশেরও বেশি নির্ভুলতার সঙ্গে হাতের দুর্বলতা শনাক্ত করতে পেরেছে। পিয়াররিভিউ করা এই ফলাফল এখনও কোনও মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।

রায়চেভ বলেন, প্রাথমিক গবেষণা পর্ব থেকে অ্যাপটি আরও কয়েকশ রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি মুখের কথার অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করার জন্যও ডিজাইন করা হয়েছে। তবে ওই বিষয়টি এখনও রোগীদের উপর পরীক্ষা করা হয়নি।

অ্যাপটি হতে পারে শিক্ষামূলক টুল : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোকের লক্ষণ শনাক্তে সহায়তা করতে পারে এমন একটি স্মার্টফোন অ্যাপ একটি দুর্দান্ত ধারণা। তবে তারা বলেন, রোগ নির্ণয় নয়, বরং এর ব্যবহার হওয়া উচিত মানুষকে লক্ষণগুলো সম্পর্কে শিক্ষিত করতে এবং জরুরি নম্বরে কল করার সিদ্ধান্ত নিতে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এর ভুল ফলাফল লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে জরুরি চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কমপ্রিহেনসিভ স্ট্রোক সেন্টারের মেডিকেল ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু রাসম্যান বলেন, স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমরা কীভাবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি তা দেখার জন্য এটি একটি চমৎকার এবং আকর্ষণীয় সুযোগ। কিন্তু জরুরি সেবায় কল করতে বা কারও স্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এটি কোনওভাবেই একমাত্র পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। এটি এখনও কেবল এক টুকরো তথ্য মাত্র, যা এই মুহূর্তে আকর্ষণীয় বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনও এর কোনও প্রকৃত প্রয়োগ নেই।

স্ট্রোকে প্রাথমিক শনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ : স্ট্রোক যখন ঘটে তখন হয় জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয় বা মস্তিষ্কের মধ্যে কোনও রক্তনালী ফেটে যায়। এটি মৃত্যুর শীর্ষ পাঁচটি কারণের একটি।

নর্থওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হাসপাতালের কমপ্রিহেনসিভ স্ট্রোক সেন্টারের সার্জিক্যাল ডিরেক্টর ম্যাথিউ পটস বলেন, এই অবস্থায় স্ট্রোক নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করার বেলায় সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় তখন প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তখন ক্রমাগত নিউরন মারা যেতে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলাচলের রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধমহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ আজ