আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী দিচ্ছে না। অন্যদিকে, ভোট বর্জন করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। ফলে উন্মুক্ত নির্বাচনে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাই। এ নিয়ে যেমন জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তেমনি চিন্তিত সাধারণ ভোটাররা।

ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তার শেষ দেখছেন না ক্ষমতাসীন দল ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে। নির্বাচনের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় নিজেদের মধ্যে প্রার্থী যেমন বেড়েছে, তেমনি দলের মধ্যে কোন্দলসংঘাত বাড়ার আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা পড়েছেন দোটানায়।

ইতিমধ্যে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চেয়ারম্যান পদে ২জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন এবং পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন অনলাইনে মনোনয়ন ফরম দাখিল পরবর্তী প্রার্থিতার বৈধতা পেয়েছেন। বর্তমানে ফটিকছড়িতে টপ অব দ্যা টপিকে পরিণত হয়েছে নাজিমুদ্দিন মুহুরী এবং বখতিয়ার সাঈদ ইরান। কারণ এ দুজনেই আওয়ামী লীগের নেতা। নাজিমুদ্দিন মুহুরী যেমন উপজেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তেমনি বখতিয়ার সাঈদ ইরান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অঙ্গ সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত বড় কোনো সংঘাত না হলেও চলছে কথার লড়াই। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আশংকা করছেন, ভোটের লড়াই থেকে সৃষ্ট বিরোধ দলের ‘অভ্যন্তরে স্থায়ী’ বিরোধ ও বিভেদের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তারা মনে করছেন যেহেতু দুইজনেই আওয়ামী লীগের, তাই তারা নিজেদের মধ্যেই বিষয়টা সমঝোতা করা উচিৎ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ যেমন নাজিমুদ্দিন মুহুরীর সাথে কাজ করছে তেমনি ছাত্রলীগের বিশাল অংশ কাজ করছে বখতিয়ার সাঈদ ইরানের জন্য। তবে নবনির্বাচিত এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি যদি কোনো পক্ষের জন্য কাজ না করেন তাহলে এ নির্বাচনের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এরপরেও নিজেদের মধ্যে দলীয় কোন্দল হানাহানির ঊর্ধ্বে উঠে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদাত আনোয়ার সাদী বলেন, নাজিমুদ্দিন মুহুরী যেহেতু দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন একইসাথে সিনিয়র তাই চেয়ারম্যান হিসেবে এবার তাকে সুযোগ দেয়া উচিৎ। অন্যদিকে বখতিয়ার সাঈদ ইরানও দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী। তার বয়স আছে, সে ভবিষ্যতে আবার সুযোগ পেতে পারে। ঊর্ধ্বতন নেতারা এ

ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আমি আশা রাখি। উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র ইসমাইল হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে যদিও দলীয় প্রতীক নেই, কিন্তু যে প্রার্থীরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের মানুষ। ইতিমধ্যে তাদের দুজনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ঐক্য ফিরে এসেছিল তা আবারো বিভাজনের দিকে এগোচ্ছে। আমাদের অনুরোধ থাকবে দুজনের মধ্যে যেকোনো একজন নির্বাচন করুক।

নাজিমুদ্দিন মুহুরী গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হন। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার তিনি জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতবার কেন হেরেছিলাম তা কারো অজানা নয়। এবার ফটিকছড়ির মানুষ আমাকে নির্বাচিত করবে। এখন আর পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। ৩৯ বছরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং গত সাড়ে ৭ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। সবার সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আমাকে বলেছেন নির্বাচন করতে। আমি কখনোই সংঘাতের পক্ষে নই, আমিও চাই একটি সমঝোতা হোক। দলীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সমঝোতার জন্য তবে এখনো কোনো সমঝোতা দৃশ্যমান হয়নি। আরো সময় আছে আশা করি একটি সমঝোতা হবে।

অন্যদিকে বখতিয়ার সাঈদ ইরান উত্তরজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে এখন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচনের ব্যাপারে ইরান বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত আছি। এখানে সমঝোতার কিছু নেই। কেন্দ্র থেকে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ যেমন অন্য দলের প্রার্থীও তেমন। আমরা সবাই স্বতন্ত্র।

এদিকে, চেয়ারম্যান নির্বাচনের পাশাপাশি বেশ আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন নাহার মুক্তা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমীন আক্তার নূপুর। তারা গতবারও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এবারও দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে ৩ জন কেউকাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তারা হলেনবর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এড. সালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন, ফটিকছড়ি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কোরাইশী। অন্য ২জন প্রার্থী হলেন, মো: নাজিমুদ্দিন সিদ্দিকী ও মো: আনোয়ারুল হক।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপি নির্বাচনে না আসায় নির্বাচনের মাঠে আলোচনায় নেই স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একইসাথে এ নির্বাচনে জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোনো দলের প্রার্থীও নেই ফটিকছড়িতে। এ ব্যাপারে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সরওয়ার আলমগীর বলেন, যে নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, দেশবাসীর কল্যাণ আসবে না, লুটপাটকে আরো ত্বরান্বিত করবে সে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের প্রশ্নই আসে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউৎসবমুখর পরিবেশে বন্দর দিবস উদযাপন
পরবর্তী নিবন্ধ‘যারা উচ্চাঙ্গ সংগীত চর্চা করেন তারা হন অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী’