শীতের চাদর

নূরনাহার নিপা | বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

একদিন এক শীতের রাতে ধ্রুব রাস্তার ধারে হাঁটছিল বন্ধু তুহিনের সাথে। গ্রামে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। সামনে ঘন কুয়াশা বাড়ি ঘর কিছু দেখা যাচ্ছে না। তারা আবার হাঁটতে শুরু করে।

রাস্তার ধারে এই শীতে আধবুড়ো লোকটা পাতলা চাদর জড়িয়ে শুধু পিঠা তৈরি করছে। চারপাশে পাতা ঝরা ন্যাড়া গাছ, ট্যাংরা পুঁটি, চিংড়ি মাছ লাফাচ্ছে ওই খেয়া জালে। একেবারে স্বচ্ছ জলে কিছু কিছু মাছ ভয়ে আছে কখন আবার জালে আটকা পড়ে।

বুড়ো লোকটাকে দেখে ধ্রুবর খুব মায়া হলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল ওর দিকে।

ধ্রুব বলল, এই শীতের রাতে এতো পিঠা কে খাবে, চাচা?

অনেকে মাঝরাতে আসে পিঠা খেতে।

আবার অনেকে পিঠা বাড়িতে নিয়ে যায়।

আমার কাছে খাঁটি রসও আছে ।

ধ্রুব বলল, আমাকেও দিন, চাচা। পিঠারস খেতে আমারও খুব ইচ্ছে করছে। খেতে খেতে তোমার সাথেও গল্প দেবো।

ঠিক আছে বাপজান, বহেন বেঞ্চিতে।

ধ্রুব বসলে বেঞ্চিটা ক্যাচ ক্যাচ করে শব্দ করে উঠল।

হাসিমুখে ধ্রুব বলল, চাচা, বেঞ্চিতে বসা মনে হয় ঠিক হবে না। ভাঙবে ভাঙবে মনে হচ্ছে।

কি কও বাপজান, বহেন আরামসে। আমি ভাপা পিঠা রস এক্ষুনি দিতাছি।

হু চাচা, তাই দেন।

ধ্রুব লোকটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তার হাতে রগগুলো চামড়া ঠেলে উপরের দিকে উঠে গেছে। বয়সও আশির কাছাকাছি হবে হয়তো। হঠাৎ চিড়বিড়িয়ে উঠল ধ্রুবর বুক।

মাটির গ্লাসে রস ঢেলে ধ্রুবর সামনে হাত উঁচিয়ে ধরল বুড়ো। গ্লাস হাতে বুড়োর হাত কাঁপছে। গায়ে শক্তির পারদ একেবারে নিচের দিকে বোঝা যাচ্ছে। এই পিঠা বিক্রি করে লোকটা আর কতো টাকাই বা পায়। ভালো খাবারই সে কোথা থেকে পাবে।

ধ্রুব তৃপ্তিস্বাদে তিন তিন গ্লাস রস খেয়ে ফেলল। পিঠারসে পেটটা টইটম্বুর হয়ে গেল।

গ্রামে কোথাও সাড়াশব্দ নেই। প্রকৃতি ঝিমিয়ে গেছে। গাছের পাখিরা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

কনকনে শীতে গ্রামের পরিবেশটা ভালোই লাগছে ধ্রুবর।

ধ্রুব বলল, তোমার কি শীতের পোশাক নেই, চাচা?

আমাগো আবার শীত বাপ। এই শীতে আমাদের কিছুই হয় না। শীত যুদ্ধ করে আমাদের সাথে পেরে ওঠে না, বাপ।

কথা শেষ না হতেই বুড়োর গোটা শরীর কাঁপতে শুরু করল। তার দাঁতের পাশ থেকে কিড়মিড় কিড়মিড় শব্দ হচ্ছে। তারপরও বুড়ো তার পিঠা বানিয়েই চলেছে।

ধ্রুব বলল, চাচা

বলো কী বলবে।

এই নিন।

এডা কী?

শাল। কাশ্মীরি শাল। এই শালে তোমার গায়ে আর শীত কামড় দিতে পারবে না। এটা হলো শীতের যম, বুঝলে? আমি যাই। হয়তো আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে যেতে পারে। দোয়া করো যেন হয়ে যায়।

ধ্রুব ব্যাগটা পিঠে তুলে নিল। এবং দ্রুত সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরল হ্রদ
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে ধরা পড়েছে একমণ ওজনের অজগর