লিফটে উঠা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

থানায় মামলা, রোগীর স্বজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

লিফটে উঠাকে কেন্দ্র করে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের মূল ভবনের ২য় তলায় ৬নং লিফটে উঠাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজনের সাথে চিকিৎসক ও অন্যান্য স্টাফরা হামলা-মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি- লিফটটি কেবল হাসপাতালের স্টাফ ও চিকিৎসক-নার্সদের জন্য। লিফটে উঠতে নিষেধ করায় তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে রোগীর ওই স্বজন হামলা করে এক চিকিৎসকের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন। ওই চিকিৎসক হলেন হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরী। পরে রোগীর ওই স্বজনকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত। মামলায় রোগীর স্বজন রেজাউলকে (৩৬) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে- নোয়াখালীর চাটখিল এলাকায়। মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আমাদের চিকিৎসকের ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত
ব্যবস্থা নিতে আমরা পুলিশকে চিঠি দিয়েছি। হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলায় রোগীর ওই স্বজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান।
এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলায় আসামির নাম রিয়াজুল ইসলাম উল্লেখ করা হলেও তার প্রকৃত নাম রেজাউল ইসলাম। তিনি স্ত্রী-সন্তান ও ভাবীকে নিয়ে হাসপাতালের ৬ তলায় (গাইনি ওয়ার্ডে) ভর্তি থাকা বোনকে দেখতে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে উঠার সময় এ ঘটনা ঘটে। বিকেলে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রেজাউলের স্ত্রী বিবি আয়েশা, বড় ভাই নজরুল ইসলাম ও ভাবি শিরিন আক্তারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
এর একটু আগেই মেডিকেল চেকআপ সম্পন্ন করে রেজাউলকে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রেজাউলের স্ত্রী বিবি আয়েশা দাবি করেন- ওই ঘটনার পর একবার লিফটে এবং উপরে নিয়ে গিয়ে আরো দুই দফায় তার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে। তাকেও হেনস্থা হতে হয়েছে।
আর বড় ভাই নজরুল ইসলাম দাবি করেন, এ ঘটনার পর তাদের বড় ভাই সরকারের এক উপসচিব স্বয়ং হাসপাতাল পরিচালকের সাথে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। দুঃখ প্রকাশ করে এ ঘটনার মীমাংসার কথা বলেন। তবে হাসপাতাল প্রশাসন তাঁর অনুরোধও রাখেনি। এ ঘটনায় তাঁরাও পাল্টা মামলা দায়ের করবেন বলে জানান নজরুল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রেজাউলের স্ত্রী বলেন, আমরা সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু সিঁড়িতে কাজ চলছিল। তাই ২য় তলায় গিয়ে লিফটের জন্য দাঁড়াই। নিচ তলা থেকে ৫/৬ জন নিয়ে লিফটটি ২য় তলায় আসলে আমরা সবাই উঠতে যাই। এ সময় এটি (লিফট) ডাক্তার ও স্টাফদের জন্য জানিয়ে লিফটে উঠতে বাধা দেয় লিফট ম্যান। পাল্টা জবাবে আমার স্বামী (রেজাউল) বলেন, এখানে তো সাধারণ পাবলিকও আছে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে লিফটে কোনো ডাক্তার থাকলে দেখাতে বলেন
রেজাউল। বিবি আয়েশার দাবি, এ সময় লিফটম্যান ‘খুব খারাপ’ একটা কথা বলেন। তখন রেজাউল বলেন, আপনি কাজটা ভালো করেননি। এরপরই লিফটে থাকা আধবয়স্ক এক লোক রেজাউলকে খামচি দিয়ে লিফটের ভিতর দিকে টান দেয়। আমার স্বামী পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ওই ব্যক্তিকে ধরতে চান। ওই সময় ওনার গায়ের জামা ছিঁড়ে যায়। পরে জেনেছি উনি ডাক্তার ছিলেন।
এ ঘটনার পরপর লিফটম্যান রাজুসহ সবাই লিফটের ভিতর নিয়েই আমার স্বামীকে এক দফা মারধর করে। পরে উপরে নিয়ে গিয়ে আরো দুই দফায় মারধর করা হয়। তারা অনেককে জড়ো করে আমার স্বামীকে মারধর করে। গায়ের টি-শার্ট ছিড়ে ফেলেছে। এক পর্যায়ে আমার স্বামী ফোন করে বড় ভাইকে জানালে তারা মোবাইলও কেড়ে নেয়।
যদিও রোগীর ওই স্বজনকে মারধরের বিষয়ে শুনেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। হাসপাতাল পরিচালক আজাদীকে বলেন, আমাদের চিকিৎসকের ওপর হামলা হয়েছে। এটা ছোট বিষয় নয়।
মামলার এজাহারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে- সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরী হাসপাতালের মূল ভবনের নিচ তলায় ডাক্তার ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ৬ নং লিফটে আরোহণ করে ৫ তলার ২৬নং ওয়ার্ডে সরকারি ডিউটিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় বিবাদী (রেজাউল ইসলাম) জোরপূবর্ক ওই লিফটে উঠতে চান। ডা. মিজানুর রহমান তাকে লিফটে উঠতে নিষেধ করেন। তখন বিবাদী ক্ষিপ্ত হয়ে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরীকে শার্টের কলার ধরে টানা হেঁচড়া করতঃ তাঁর শার্ট ছিঁড়ে ফেলে ও তাকে কিল ঘুষি মেরে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এবং বিভিন্ন ধরণের ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। এ ঘটনার পর বিবাদী পালানোর চেষ্টা করলে ডা. মিজানুর রহমানসহ আশপাশের লোকজন বিবাদীকে আটক করেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে ঘটনাটি জানিয়ে বিবাদীকে তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান চৌধুরীকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
আসামি থানা হাজতে রয়েছে জানিয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান আজাদীকে বলেন, তারা আসামিকে ছাড়াতে এসেছিলেন। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দিয়েছি।
এদিকে, রাত ১২টার দিকে রেজাউলের ভাই নজরুল ইসলাম জানান, তারা মামলার এজাহার নিয়ে পাঁচলাইশ থানায় এসেছেন। ডাক্তার মিজানুর রহমান চৌধুরী ও লিফটম্যান মো. রাজুর বিরুদ্ধে মামলা করতেই তারা এসেছেন। তবে ডিউটি অফিসারের কক্ষে তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। ওসি সাহেবের সাথে দেখা করার সুযোগ তখনও পাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাত ১২টায় পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে। তবে হাসপাতালের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশের সামনে প্রতিপক্ষের হামলা, ছাত্রলীগ নেতা খুন
পরবর্তী নিবন্ধকাউন্সিলরপুত্র গ্রেপ্তার